সময়ের স্রোতে নিত্য আলোড়িত হতে হতে কত দূরের মানুষ কাছে আসে, আলো হয়ে যায় মনের ঘর। আবার কত কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, বেদনার মতো বাজে চলে যাওয়া। কিন্তু আসলেই কি চলে যায় তারা? বাহিরে যে চলে গেলো, তার অশ্রুঝলোমলো মুখখানি ধরা থাকে স্মৃতিতে। বেদনার অর্ঘ্যে তার চিরদিনের অভিষেক। তাকে মুছবে কে?
"ভুলে যা" "ভুলে যা" "ভুলে যা" বললেই কি কিছু ভোলা যায়? কোন্ বহুদূরের পাহাড়ের চূড়া থেকে উৎপন্ন হয়ে, কত মাঠবন পার হয়ে, কোন্ সুখউঠানের পাশ দিয়ে কলকলিয়ে, কোন্ দুখপাথরের গায়ে জলহাত বুলিয়ে বুলিয়ে বয়ে যেতে থাকা জলছলছল নদীকে কি উৎসে ফিরে যা বললেই সে ফিরতে পারে?
ভুলে যাওয়া যায় না কিছুই। মনের স্তরে স্তরে আলোআঁধারির খেলা, ধাপে ধাপে নেমে গেছে সিঁড়ি, ও ও ও ই কত নিচে, শেষ দেখা যায় না। ধাপে ধাপে উঠেও গেছে সিঁড়ি, ও ও ও ও কত উপরে, ঝকমকে নীল যেখানে গভীর মধ্যরাত্রিনীলে মিলিয়ে গিয়ে তারার মণিকণায় হেসে উঠেছে, সেই দিকে, উপরের দিকেও শেষ দেখা যায় না। এই সব সিঁড়িরা কত সব রহস্যপুরীতে গিয়ে থেমেছে, কেজানে!
জীবনানন্দ চিরকাল সেই গভীর রহস্যলোকের গল্প বলেছে আমায়, মহীনের ঘোড়ারা সেখানে কার্তিকের জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে ঘাস খেয়ে চলেছে, সেখানে বিলুপ্ত নগরীর মর্মরপ্রাসাদে আজও অপেক্ষায় আছে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেম, ধানসিঁড়ি তীরে চেনা কাশফুলমাঠ ফিরিয়ে আনে গতজন্মস্মৃতি, হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে, হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে.....
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ
ভিক্ষাপাত্র ধুয়ে নিয়ে বহে গেছে জল
স্মৃতিতে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে,
কুয়াশার মাঠশেষে বাঁশপাতাবনে
যেমন মায়াবী চাঁদ একা জেগে থাকে।
বাসনার ধূলাবালি ধুয়ে নেবো ভেবে
নির্বাসনস্নানে নামি নীবারার স্রোতে,
আকাঙ্ক্ষা-পাখিরা তবু ঝাপটায় ডানা
দুইচোখে জলছবি ছায়াতে আলোতে।
ভেবেছি তো নি:শেষে ভুলে যাবো সব
আগুনের শিখা জ্বেলে করেছি শপথ,
তপ্ত হাওয়ায় তবু উড়ে আসে বালি
ছুঁয়ে যায় শিলাঢাকা হৃদয়ের পথ।
এখনো সে পুরাতন জল বয়ে চলে
এখনো জমে নি সব কঠিন বরফে-
এখনো তো পাখামেলা মেঘ ভালোবেসে
আলো লিখে যায় গান অচেনা হরফে।
ভিক্ষাপাত্র ধুয়ে নিয়ে বহে গেছে জল
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে.....
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে.....
***
Monday, July 13, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment