Friday, February 25, 2011

শারদবেলা-ভবন

আমার একটা খুব চেনা সবুজ রেলগাড়ি ছিলো, শালুকফুল ফুটে আলো হয়ে থাকা জলাভূমির পাশ দিয়ে চলে যেতো কুঊঊ ঝিকঝিকঝিক করতে করতে। একজোড়া ফড়িং উড়তে উড়তে জটিল পাক খেয়ে ফিরে আসতো পাড়ের কাছের সতেজ ফুলটির কাছে। তারপরে গাড়ী চলতে চলতে হঠাৎ কাশফুল ভরা মাঠ, দূরে দূরে কতদূরে ছড়িয়ে গেছে, ছোটোবেলার মজার ছড়ার লাইনটা মনে পড়ে- "উলুখেতের ফুলু যেন তুলু থুরুথুরু"---শরতের হাওয়ায় কাশফুল সাদা চুল ভরা মাথা দোলায়, ঢাকের শব্দ আসে জলস্থল পার হয়ে।

সেইসব দিনে এমন আশ্চর্য রোদ উঠতো, মনে হতো খুলে গেছে কোন লুকানো রোদ্দুরমহলের দরোজা! আকাশ এত নীল ছিলো যে মনে হতো সাদা কাপড় ঘষা দিলে নীল হয়ে যাবে। সেইসব দিনে সরোবর সড়কের পাশের শারদবেলা ভবন থেকে আমি তোকে চিঠি লিখতাম নীল। শুধু নীল তখন তুই, এখনকার অনেক দূরের খুব রাশভারী ডক্টর রুদ্রনীল শর্মা না।

সেই চিঠিগুলো উড়ে গেছে হালকা তুলোর ফুলের মতন শরত মেঘেদের সাথে। সেই শারদবেলা-ভবনটাও নেই, পুরানো সব বাড়ীগুলোই ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে। সেই সরোবর সড়ক বদলে গেছে। লেক বুজিয়ে ফেলে ওখানে এখন পাঁচিলঘেরা ময়ূখ আবাসন হয়ে গেছে, মস্ত মস্ত বহুতল বাড়ী, খোপে খোপে লোকেরা থাকে। খুব উপরের ঘরগুলোর নিশ্চয় অনেক দাম, আকাশের মেঘেদের কাছাকাছি থাকা!

নীল, তুই ঐ সমুদ্রটা পার হয়ে চলে গেলি, তখন আমার সবে স্কুলবেলা শেষ, কলেজে ভর্তির তখনও ক'মাস দেরি। তুই বললি চিঠি দিবি সবসময়। এসেছিলো কয়েকটা চিঠি, উত্তরও গিয়েছিলো, সেগুলো কি এখনো তোর কাছে আছে নীল? নাকি আমার সব চিঠিগুলোর মতন ওগুলো ও সব উড়ে গেছে প্রজাপতিডানার রেণুর মতন?

যতবার ছুটে যাওয়া সমুদ্রবিভ্রমে,
ঘোলা বালিয়াড়ি আটকে দেয় পথ-
পায়ের তলায় ভাঙা শঙ্খেরা
বিঁধে যায় কাচের মতন।

অনেককাল আগের ভাঙাকাচবেঁধা পায়ের
এক মূক বালিকাকে চিনতাম-
পায়ের কাচ তুলতে সে ফিরে এসেছিলো
বোরোলীনমাখা বেলকাঁটার কাছে।

সমুদ্র পিছনে রেখে ফিরে আসি
সংসারের বালিযুদ্ধের দিকে।
উপকথার ঢেউয়েরা পিছু ডাকে
সে ভাষার মর্মোদ্ধার করতে পারি না।

নিবিড় রাত্রিমগ্না জীবনের
গভীর কোণে কোণে জোনাকিরা
জ্বলে নেভে, জ্বলে নেভে, জ্বলে নেভে
ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

No comments: