Friday, February 25, 2011

শঙ্খপৃথিবী

ডানহাতের পিঠের কালচে বাদামী দাগটার উপরে হাত রেখে তুই জিজ্ঞেস করলি, "এটা কীসের দাগ রে তুরাইন?"

আমি হাত টেনে নিতে গিয়ে টের পেলাম তোর মুঠি ঘিরে ধরেছে হাত, ছাড়াতে পারি না। কিন্তু কী বলবো তোকে?

আমরা আগুন নিয়ে যখন প্রথম খেলতে শিখলাম, সেই সময়ের পোড়া দাগ এটা? তোর তো কিছু মনে নেই চিরল। তুই সব ভুলে গেছিস। ভালোই তো, ভালোই হয়েছে।

ঝাঁক ঝাঁক পাখি বাড়ি ফিরছিলো সেই সন্ধ্যায়, ভাগ হয়ে যাওয়া মালার মতন উড়ে যাওয়া পাখির দল, উড়তে থাকা মালা। আরেক ঝাঁক আসে একরাশি তীর যেন। আরেক ঝাঁক, আরেক ঝাঁক, আরো এক ঝাঁক। এত পাখি কোথা থেকে আসে?

আকাশটা কমলা হয়ে ছিলো অচেনা আলোয়। আমরাও কমলা হয়ে গেছিলাম নিশ্চয়। সেই কমলাপরীর মায়ায় ভুলেই কি পথ ভুল হয়ে গেল আমাদের?

আকাশে একটা ঘুড়িও ছিলো, কেটে যাওয়া ঘুড়ি, বাতাসে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাচ্ছিলো নিরুদ্দেশে।

নিশিডাকা রাতে ছায়াপথ জ্বলজ্বলে
মায়াছবি পড়ে চোখপুকুরের জলে
ওম ছুঁয়ে গেছে শঙ্খপৃথিবী ত্বকে
মেঘমোহনার খাতে?

কোথাও ছিলো কি খোলা সাগরের হাওয়া
কোথাও ছিলো কি বারেবারে আসা যাওয়া?
কোথাও ছিলো কি খাপখোলা তরোয়াল
তারা-শনশন রাতে?

সাগর থেকে কি ফিরেছিলো সে নাবিক?
চাঁদছলছল ঢেউকথাদের পথে?
নাকি ডুবে গেল কালিগোলা কালীদহে
ভুল আলেয়ার হাতে?

নিশিডাকা রাতে আজও ছায়াপথ জ্বলে
মায়াছবি নেই অথৈ গহনজলে
লোহা গেঁথে আছে দুগ্ধপৃথিবী ত্বকে
মৃত্যুমোহনা খাতে।

কোথায় যেন কে গাইছে, জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে---- এ গান কে গাইছে এত রাতে? জীয়নকাঠি মরণকাঠির গান, উদাসীন ধ্রুবতারাও এ গান শোনে কান পেতে।

বালিতে এলিয়ে শুয়ে মাথা নামিয়ে দেই বালির বালিশে, আকাশটা তারায় তারায় ঝমঝম, ঠাসাঠাসি তারা। ধরছে না যেন, নীল বাটিটা ছাপিয়ে উপচে পড়বে যেন এখনি। নক্ষত্রসুরা পান করতে করতে পাশাপাশি ঘুমিয়ে যাই আমরা।

No comments: