Wednesday, November 16, 2011

ইচ্ছে-জলফড়িং

হেমন্তের দিন গুলোকে বিষাদবিধুর বলেন জ্ঞানীগুণীরা অনেকে। দিন ছোটো হয়ে যায়, আলো পাওয়ার সময়টুকু কমতে কমতে কমতে কমতে কেমন একটা মনকেমন রেখে যায়, বিরাট বিরাট গাছেদের সব সবুজ পাতাগুলো দেখতে দেখতে বাদামী লাল কমলা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যেতে থাকে, ন্যাড়া গাছেরা নাঙ্গা সন্ন্যাসীর মতন স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন নীল আকাশের নিচে। এমন সব দিনে মানুষের মন ও নাকি কেমন বিষাদনীল হয়ে যায়।

দরজাবন্ধ হয়ে যাওয়া ঘরের মতন লাগে মনটা। তাই নিয়েই আসি যাই ঘুরে বেড়াই, দৈনন্দিনের দাবী তো না মিটালে চলে না। নতুন কোনো লেখা আসে না কলমে, আসে না মনে, অন্যদের লেখাপত্তর পড়ি- এখনকার মানুষের লেখা, অনেক বছর আগের মানুষের লেখা, আগে যেসব লেখা পড়ে ভালো লেগেছে, আনন্দ হয়েছে সেসব লেখা। কিন্তু কিছুই যেন যায় না ভিতরে, ঝরে যাওয়া পাতাদের মতন ঝরে যায়, উড়ে যাওয়া হাঁসেদের ডানা থেকে ঝরে যাওয়া জলবিন্দুর মতন ঝরে যায়।

সেই অলৌকিক ইচ্ছেরা কই? ওরাই তো টান দিয়ে বার করতো বাইরে, ওরাই তো দেখাতো আলো দেখাতো ছায়া দেখাতো মেঘেরোদে জড়াজড়ি খেলা। সেই মেঘ সেই রোদ তো আছে, সেই আকাশও তো একই, তবে ইচ্ছের সেই পক্ষীরাজ কোথায়? সে কি আসে আর যায়, ধরা দেবে না?

এই তো একটা ইচ্ছে কেমন আলোয় ছায়ায়
খাতার পাতায় দু'এক টুকরো আঁচড় কাটায়-
সময়বেড়া টপকে গেছে সফেদ ঘোড়া
ঐ ওপাশেই ঝিণুকবাগান বর্ণচোরা,
এই তো আবার চোখ ঢেকে যায় বৃষ্টিধারায়
ইচ্ছেগুলো জলফড়িং এর সঙ্গে পালায়।

আবার দেখি রোদ পড়েছে ছিন্নপাতায়
বৃষ্টিধোয়া ছবির মাঠের রঙীন ছাতায়,
ঐ তো আসে দু'পাক খেয়ে ঝিলিকভ্রমর
কানের গোড়ায় স্পষ্ট শুনি গুঞ্জনস্বর
এই তো আবার চোখ ঢেকে যায় ঝড়ের ধূলায়
স্বপ্নদুপুর দুদ্দাড়িয়ে দৌড়ে পালায়।

***

No comments: