মনে পড়ছে সেই দিনটা! স্পষ্ট হয়ে মনে পড়ছে। নাইনের পরীক্ষার সীট পড়েছে দোতলায়, ভীষণ গরম ও লোডশেডিং (লোডশেডিং প্রায় অঙ্গাঙ্গী জড়িত ছিলো গরমের সঙ্গে সেইসব দিনে )৷ সবাই দরদর করে ঘামতে ঘামতে ও আঁচলে মুছতে মুছতে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেদিন ইংরেজী পরীক্ষা৷ কাগজ ও প্রশ্নপত্র পর্যন্ত গরম, গার্ড যিনি দিচ্ছিলেন তিনি বোতলে করে জল এনে টেবিলে রেখেছেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে চোখে দেওয়া হবে৷ পরীক্ষা শেষের যখন আধাঘন্টা বাকী, তখন বিদ্যুৎ এলো, ফ্যান ঘুরতে শুরু করলো ৷হাওয়াটা গরম,তবু তো হাওয়া! ঈশ, যেন সেই হাওয়াটা মুখের আর চুলের উপরে অনুভব করতে পারছি এখনো৷ কিছুই কি ফুরায় না? খানিকক্ষণের মধ্যে হাওয়া ঠান্ডা হয়ে এলো, আমাদের ঘামশুকানো কালচে মুখে শান্তি৷ উত্তর শেষ করে গুছিয়ে বেঁধে জমা দিয়ে বেরোনোর পরে শ্রীতমা বাইরে এসে বললো," পরীক্ষা তো নয়, অগ্নিপরীক্ষা৷"
পরের দিন আরেক কান্ড৷ সেদিন জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা, যথারীতি লোডশেডিং, ঘামতে ঘামতে ও মুছতে মুছতে পরীক্ষা৷ কিন্তু অর্ধেকের পরে হাওয়া ঠান্ডা হয়ে এলো, আলো ও বেশ কমে এলো৷ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি,"ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে" আকাশ মেঘে ঢাকছে,বৃষ্টির সম্ভবনা, ঠান্ডা স্নিগ্ধ হাওয়া, আহা আহা আহা, কী মধুর৷
কিন্তু মধুতে টক মিশে যায় যখন আর নজর চলে না, এত অন্ধকার৷ এ ঘরে দুখানা টিউবলাইট থাকলে কি হবে, লোডশেডিং তো! জানালার কাছ ঘেঁষে বসে সেই আলোতে প্রাণপণে ছাত্রীরা লিখছে, যাদের আগেই ৮০% লেখা হয়ে গেছে তারা আর দু:সাহসিকতায় না গিয়ে খাতা বাঁধতে শুরু করেছে৷ বিপুল ঝড় এসে হাজির এমন সময়৷ সঙ্গে ছাঁট বৃষ্টি৷ সে এক টোটাল কেওটিক অবস্থা!
জয় মা বলে খাতাটাতা বেঁধে ফেলছে সবাই, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নাকি সবাইকে গ্রেস মার্ক্স দেওয়া হবে, জেনারেল গ্রেস৷ এক ঘোর কূটতাত্ত্বিক এই অবস্থায় প্রশ্ন তুললো, "দিদিমণি কারুর যদি এমনিতেই নব্বুই লেখা হয়ে গিয়ে থাকে, সে পুরোটাই ঠিক করে, তাহলে জেনারেল গ্রেসের তিরিশ জুড়ে তো তার একশোকুড়ি হয়ে যাবে!" সকলে তো থ! বলে কী রে এ?
সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের আরেক ঝাপ্টা, কার না বাঁধা খাতার পাতা ফরফর করে উড়ে গেলো, পিছনে দিদিমণি দৌড়ালেন, বাইরে ঠল্লর ঠল্লর শিলপড়ার আওয়াজ! খাতা জমা দিয়ে কয়েকজনের শিল কুড়াতে দৌড়৷ "ওরে ছাতা, ছাতা নে রে, নইলে চাঁদি ফেটে যাবে" বলে তাদের ফেরানো হয়, তারা ছাতা খুলে সামনের খোলা ছাদে শিল কুড়ায়, সাদা হয়ে গেছে তখন সেই ছাদ ৷
সেভেনে এইটে দু'বছর পড়া হতো সংস্কৃত৷ সেটাও একটা অন্য ভাষা, কিন্তু কদর নেই৷ প্রচুর শব্দরূপ ধাতুরূপ মুখস্থ করতে হয় বলে ভারী বিরক্ত সবাই৷ কেউ কেউ নাইনে ঐচ্ছিক বিষয় সংস্কৃত নেয়া যায় এই মর্মে এটাকে গুরুত্বপূর্ণ করার একটা চেষ্টা দেখালে অন্য চটপটে বলিয়ে কইয়ে লীডার গোছের বন্ধুনীদের ধমকে থেমে যায়, এর নাকি কোনো সাবজেক্ট ভ্যালু নেই৷ কোনোরকমে দুবছর তরে গেলেই ব্যস৷
কালের কী পরিবর্তন! মাত্র কয়েকশো বছর আগে এ দেশে শিক্ষা বলতে ছিলো সংস্কৃত মাধ্যম-ব্যাকরণ সাহিত্য জ্যোতিষ তর্ক মীমাংসা৷ আজকের দুনিয়ায় এরা লুজার, সাগরপাড়ের নৌপ্রযুক্তিধারী বিজয়ীরা শুধু আমাদের দেশ দখল করেনি, মন পর্যন্ত কব্জা করেছিলো৷ ওদের রেনেসাঁস? সত্য ত্রেতা দাপরমে কৈ নেহি কিয়া!!!
কেমন করে যেন পশ্চিমের ওরা লীডার, আমরা সবেতে ফলোয়ার৷ আজ যদি ওরা বলে সংস্কৃতের দাম আছে, এইসব লোক, বহুমস্তক একাকার জাতি, মুহূর্তে লয়াল ফলোয়ার হয়ে পড়তে শুরু করবে৷ অথচ আমরা তো এমন করে সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত নাচাতে পারিনে আঙুলের ডগায়!
এইসব কূট প্রশ্ন অবশ্যই তখন দেখা দেয় নি৷ এত সময় কোথায়? ভবিষ্যতের দুনিয়ার চেয়ে আসন্ন পরীক্ষার তাড়া ঢের বাস্তব৷
গোটা ইস্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক, বাকীরা শিক্ষিকা৷ এই শিক্ষক হলেন পন্ডিত স্যর৷ ইনি আর রুম্পাদি সংস্কৃত পড়াতেন৷ চটপটে সমাজসচেতন মেয়েরা এও বলতো শুধু নাকি কিছু লোককে চাকরি দেবার জন্য এই হতচ্ছাড়া ভাষার দুটি বছরের ক্লাস যা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কিছুই করা যাবে না৷ এইটে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেলে সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে ও কালীতলায় পুজো পাঠাবে এই মোটামুটি পরিকল্পনা ছিলো৷
সেভেনে পড়াতেন পন্ডিত স্যর, বার্ধক্য ও দন্তহীনতা তাঁর কথা বোঝার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করতো৷ তবে খুবই ইন্ট্রোডাক্টোরি লেভেলের পড়া হওয়ায় আর নানা সহায়ক থাকায় তেমন পাত্তা দেয়া হতো না এসব অসুবিধের৷ ক্লাস এইটে রুম্পাদি পড়াতেন৷ খুব ঠান্ডা গোছের মা-মা চেহারার দিদিমণি, মন দিয়ে পড়াতেন৷ আগের বছরের মেয়েরা নাকি খুব দুরন্ত ছিলো, উনি ক্লাসে আসার আগে নাকি বোর্ডে মেয়েরা লিখতো "ফলম ফলে ফলানি/ না পারলে রুম্পা দেবে ক্যালানি৷"
দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেলো, আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার শেষে আর সংস্কৃত পড়তে হবে না এই আনন্দে অনেকেই পুজো দিয়ে এলো রক্ষাকালীতলায়৷ ঐ পরীক্ষার দিন আবার আমি আর শুভাশ্রী জানালার তাকে রাখা জলের জাগ উল্টে ফেলে দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি, তারপরে দুজনেরই মনে পড়ে, "য পলায়তি স জীবতি"৷ সেই মর্মে বাঁচন সেদিন৷
নাইনে আর নেই শব্দরূপ ধাতুরূপের ড্রিল, এইবারে গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজী নিয়ে লড়াই৷ কিন্তু শেষের ও শেষ থাকে কখনো কখনো৷ নাইনে পন্ডিত স্যর রিটায়ার করলেন, আমাদের উপরে পড়লো ওনাকে বিদায় শুভেছা জানানোর ভার৷ অনেক সুমধুর তৎসম শব্দ দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মানপত্র লেখা হলো, বিদায়ের দিন সকলের চোখ ছলছল৷ রিটায়ারের কয়েকমাস পরে উনি পরলোকগমন করেন৷
আমাদের ওখানে প্রথম বইমেলা হলো ঘোর বর্ষায়, তখন আমরা সবে উঠেছি ক্লাস নাইনে। এতদিন শুধু আমরা শুনে এসেছি কলকাতায় বইমেলা হয় শীতের শেষে, সে এক দুর্দান্ত কান্ড, কিন্তু অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া সেই বিরাট বিখ্যাত বইমেলা দেখার সৌভাগ্য কারুর হয়নি৷ ইস্কুল থেকে দিদিমণিরা নিয়ে চললেন আমাদের, রাস্তা জলেকাদায় ভর্তি, মেলা-প্রাঙ্গন কাদা প্যাঁচপেঁচে যথারীতি, কাঠের পাটাতন পেতে পেতে চলার জায়গা করা হয়েছে কোনোরকমে, স্টলের উপরে তাঁবুর কাপড় দিয়ে বৃষ্টির জল আটকানোর প্রচেষ্টা৷ আমরা জলে কাদায় হেঁটে হঁটে পরম উৎসাহে বই দেখতে লাগলাম৷ ভোস্তকের স্টলে তখনো পাওয়া যেতো মানুষের মতো মানুষ, ইস্পাত, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান৷
স্টলের হাসিমুখ ভদ্রলোক কেন কে জানে আমাকে "মানুষের মতো মানুষ" কিনতে উৎসাহিত করলেন, এদিকে আমি দু'খন্ড ইস্পাত নিয়ে ঝুলোঝুলি করছি৷ কিনতেই হবে৷ মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার সময় নাকি লোকে ও বই সঙ্গে নিতে চায়, কী আছে দেখতেই হবে৷ আর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মানুষের মত মানুষ আছে, ধলা কুকুর শামলা কান আছে, ওর থেকে এনে তো ওগুলো পড়তেই পারবো৷ কিন্তু এই পাভেল করচাগিনের গল্প আমার নিজের চাই, দৃষ্টি হারিয়ে হাতড়ে হাতড়ে ও কি এমন লিখেছে যে লোকে মঙ্গলগ্রহে নিতে চায়? ভদ্রলোক আমার যুক্তি মেনে নিলেন, দুইখন্ড বই বেঁধে প্যাক করে দিলেন, মহানন্দে ফিরে এলাম ৷
অনেক পরে, অনেক অভিজ্ঞতার পরে দেখেছি এই ইস্পাত, মানুষের মত মানুষ, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান, ধলা কুকুর--এইসব বইয়ে লক্ষ্যণীয় ভাবে অকৃত্রিমের একটা জোরালো রঙ থাকতো যেটা কিনা ইংরেজী বইয়ে খুবই মৃদু৷ সেখানে ব্যাপারটা মানুষকেন্দ্রিক, অনেক বেশী অ্যাকোয়ার্ড গুণের বর্ণনা৷ তুলনায় রুশ বইগুলো শুরুই হতো এইরকম সব বর্ণনা দিয়ে, "ঠান্ডা আলোয় তখনো তারারা ভাস্বর" নিপুণ অকৃত্রিম বর্ণনায় জেগে উঠতো শীতশেষের বরফগলা বনে স্নোড্রপ ফুল, বিশাল মহীরুহসমূহ যেন প্রাসাদের মতন, ছড়ানো ডেইজির মধ্যে বসে আছে এক তরুণী, নদী থেকে স্নান করে ভিজে ডানার মতন পরশ রেখে শস্যমাড়াইয়ের জায়গায় ফিরে আসছে তরুণী, সূর্যমুখী পুষ্ট হয়ে উঠছে আলো শুষে শুষে৷ বারে বারে ফিরে ফিরে তাই ঐ বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করে, আমাদের সমস্ত সফিস্টিকেশনের শেকলের আড়ালে লুকিয়ে থাকে যে হৃদয়বাসী মুক্ত দিগম্বর, সে চকিতে দেখা দিয়ে যায় ঐ ঠান্ডা খরশান আলোর তারাদের মধ্যে, ঐ দিগন্তলীন মাঠে কুশবিছানায় ৷
এইভাবে আলোয়-ছায়ায় রোদে-বৃষ্টিতে মায়ায়-নির্মায়িকতায় কোমলে কঠোরে আমরা বড়ো হয়ে উঠতে থাকি, নিজেরা বুঝতে পারিনা, এত তাড়া আমাদের তখন৷ একে ইস্কুল তায় টিউশন পড়তে যাওয়া ৷ ছোটোবেলা যারা গান নাচ আবৃত্তি আঁকা বা অন্য কোনো এক্সট্রা কারিকুলার কিছুতে ঢুকেছিলো, নাইনে উঠে সব বন্ধ রাখে, পরে আবার সময় সুযোগ বুঝে ঝাঁপানো যাবে৷
প্রচুর বিষয় মাধ্যমিকে, অংক, বাংলা, ইংরেজী, প্রকৃতি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস ভূগোল কর্মশিক্ষা শারীরশিক্ষা--সব আবশ্যিক৷ শুধু একটি ঐচ্ছিক, কেউ নিতো পদার্থবিদ্যা, কেউ অংক, কেউ জীববিদ্যা, কেউ সংস্কৃত আর বাকীরা গৃহবিজ্ঞান৷ কেন যেন এই ধারণাটা ছিলো সকলের যে যারা পদার্থবিদ্যা বা অংক নিয়েছে তারা একটু কুলীন ধরনের ছাত্রী, যারা জীববিদ্যা নিয়েছে তারাও কুলীন তবে নৈকষ্য নয়, বাকীরা অকুলীন! কেউ এসবের প্রতিবাদ বা অন্যরকম কথা বলে না, হয়তো কোনো অর্থই নেই বলার, সমাজব্যপী ধারনা তো সহজ কথা নয়! ছোটো একটি বিভাজন হয়ে যায় আমরা খেয়াল করিনা, অথবা করি কিন্তু এটাই এত অনতিক্রম্য যে মেনে নিই৷ হয়তো অন্যরকম হতে পারার কোনো প্রশ্নই ওঠে না আমাদের মনে!
শুভাশ্রীর দিদি তখন জয়েন্টের জন্য তৈরী হচ্ছে, সে আমায় বুঝিয়ে দিলো উচ্চমাধ্যমিকে পিওর সায়েন্স নিতে পারলে জয়েন্টে সুবিধে হয়, জয়েন্টে পেলে আর দেখতে হবে না, হয় ডাক্তারি নয় ইঞ্জিনিয়ারিং৷ ওর নিজের ব্যক্তিগতভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংএ যাওয়ার ইচ্ছে, এদিকে নাকি বাড়ীতে বলছে মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং এ শাইন করতে পারে না ভালো৷ তাই ওকে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তারপরে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়তে হবে৷
কী সুন্দর ছক করা হিসেব নিকেশ আগে থেকেই করে রাখা! আমার তাক লেগে যায়! তবু কুট কুট করে একটা প্রশ্ন কামড়াতে থাকে মনের মধ্যে, এই দুইখানা লাইন ছাড়া অন্যদিকে যাওয়ার পথ নেই? তাহলে রিসার্চ কারা করে, নতুন আবিষ্কার কারা করে? শুভাশ্রীকে জিজ্ঞেস করতে ও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো ওসব লাটসাহেবীর রিস্ক এখানে, এ গরীব দেশে চলেনা, আইআইটি থেকে যারা পাশ করে বেরোয়, তারা আমেরিকা গিয়ে তারপরে রিসার্চ টিসার্চ ইত্যাদি করতে পারে যদি চায়!
আমার তো শুনে আরো তাক লেগে যায়! বলে কী মেয়েটা? আইআইটি মানে কি সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো যেখান থেকে নানারকম গল্প আসে? আরশোলা নিয়ে বক্তৃতা দিতে বলেছে আইআইটি ড়্যাগিং এর সময়, এইটাই যেখানের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ গল্প, বাকী সব ভয়াবহ? ইলেকট্রিক শক টক নাকি পর্যন্ত দিয়েছে, তিনতলার ছাদের আলসেতে হাঁটতে বাধ্য করেছে পা ফসকে নাকি একজন পড়েও গেছিলো, এইরকম সব ভয়াবহ কথাও শোনা যেত।
ও বলে হ্যাঁ, সেই আইআইটি ৷ ওর এক মামাতো দাদা নাকি ওখানে আছে৷ ও আরও বলে ড়্যাগিং ভালো জিনিস, ওতে নাকি লোককে স্মার্ট করা যায়৷ শুনে আমার এত তাক লাগলো যে আর সেদিন কিছু জিজ্ঞেসই করতে পারলাম না৷
স্কুলে আমাদের অংক শেখান এণাক্ষীদি, অরুণাদি প্রকৃতিবিজ্ঞান, এদের দু'জনের ক্লাস নাকি খুব মন দিয়ে করতে হবে৷ রুবীদির জীববিদ্যাও৷ যদিও প্রাইভেট দিদিমণি মাষ্টারেরা বুস্টার ডোজ পরে দেবেনই, মোটা মোটা নোটও, তবু এদের ক্লাস মন দিয়ে শোনা ভালো, সেফসাইডে তো থাকতে হবে, নাকি? যদিও ইস্কুল শুধু নিয়মরক্ষার জিনিস, এখানে না এলে ডিগ্রী মেলে না, তাই আসা৷ এই ধারণা এত সর্ব্যব্যাপী যে কিছুই বলে ওঠা যায় না অন্যরকম ৷
কিন্তু মজাও হয় কখনো কখনো৷ ইতিহাস পড়াতে আসেন শিলাবতীদি, এসেই প্রথমে একটি সস্নেহ ধমক, "মেয়েরা, চু-উ-প করো! বাপরে কী টকেটিভ কী টকেটিভ! " বই খুলে পড়ে যান ইতিহাসের নানা ব্যাপারস্যাপার, কোনো কোনো অংশে এসে বলেন "এসব পোড়ো না মেয়েরা, সময় নষ্ট৷" সাজেশান দেন কী কী পড়তে হবে মাধ্যমিকের জন্য৷ বলেন, "জানি তোমাদের অনেকের অন্য বিষয়ে প্রাইভেট টিচার থাকলেও ইতিহাসে নেই, তাই এখানেই সাজেশান গুলো নিয়ে নাও৷"
ওনার এই সময় নষ্ট আর টকেটিভ এই দুটি ক্রমশ ওনার সঙ্গে সমার্থক হয়ে পড়তে থাকে৷ আমরা নিজেরা হাসাহাসি করি, ইতিহাসের শিক্ষিকা নিজেই বলছেন ইতিহাস পড়া সময় নষ্ট-এর চেয়ে সাংঘাতিক তির্যক কমেডি আর কী হতে পারে?
আর ছিলেন কুন্তলাদি, ইনিও প্রকৃতিবিজ্ঞান পড়াতেন, এনার নাম মেয়েরা বহুকাল ধরেই দিয়েছিলো চিন্তামণিদি৷ কারণ কোনো প্রশ্নের উত্তর বা অন্য কোনো কিছু এনার কাছে জানতে চাইলেই ইনি নাকি বলতেন, " দাঁড়াও আমি একটু চিন্তা করে নিই" বলেই গভীর চিন্তায় ডুবে যেতেন।
( চলবে )
Tuesday, February 18, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment