জীবনের উৎপত্তি বা ওরিজিন অব লাইফ ব্যাপারটা বেশ জটিল। সৌরজগতে এতগুলো গ্রহ,উপগ্রহ-তার মধ্যে শুধুমাত্র এই পৃথিবী গ্রহটাতেই(কেউ কেউ যুক্তিনির্ভর অনুমান করে বলেন মঙ্গল গ্রহে বা বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপায় অথবা শনির উপগ্রহ টাইটানে প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে, তবে সেসব প্রমাণিত নয় এখনও, এখনও অবধি কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় নি ) এত রকমের প্রাণ, জলে স্থলে বাতাসে প্রাণে প্রাণে ছয়লাপ, আণুবীক্ষণিক জীব থেকে শুরু করে বিরাট বিরাট সব মহামহীরুহ ধরনের জীব, সবই এইখানে।
কিন্তু শুরুতে তো এরকম ছিল না। প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে পৃথিবী তৈরী হয়েছে সৌরজগতের আর সবকিছুর সঙ্গে, তখন পরিবেশ ছিল একেবারেই অন্যরকম। শুরুর থেকে প্রথম একশো কোটি বছর কোনো প্রাণের চিহ্ন ছিল না দুনিয়ায়, সবচেয়ে পুরানো যে প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ফসিল রেকর্ডে, সে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি বছরের পুরানো। সরল প্রোক্যারিওটিক ধরণের জীবকোষের ফসিল সেসব। কিন্তু সেও পরম আশ্চর্য ব্যাপার, কী করে জড় পাথর জল গ্যাস ধূলা থেকে তৈরী হলো এমন জিনিস যা কিনা নিজের প্রতিলিপি তৈরী করতে পরে? তারপরে ক্রমাগত জটিল থেকে জটিলতর জীবকোষের চিহ্ন পাওয়া যায়, জীবজগৎ বিবর্তনের পথে এগিয়ে গিয়েছে জটিলতার দিকে, একসময় তৈরী হয়েছে ইউক্যারিওটিক জীবকোষ, যা দিয়ে আমরা তৈরী।
কিন্তু শুরুটা হলো কেমন করে? এই নিয়ে বহু তত্ত্ব আছে, কেউ বলেন পৃথিবীতেই হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া,মিথেন, জলীয় বাষ্প এইসবের সংযোগে নানারকম জৈব বস্তু তৈরী হয়েছে, তারপরে তার থেকে ক্রমে জীবকোষ। কেউ বলেন জৈববস্তু সরল প্রাণকোষ সবই অন্যত্র তৈরী হয়েছে, উল্কাখন্ডের মাধ্যমে এসে পড়েছে আদিম পৃথিবীতে, তারপরে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে নানাভাবে বিবর্তিত হতে হতে জৈববৈচিত্রের সৃষ্টি হয়েছে।
এইসব কিছু তথ্য এখন পাওয়া যত সহজ তখন সেই নেট-পূর্ব সময়ে কম্পিউটার পর্যন্ত না চেনা আমাদের পক্ষে পাওয়া চিন্তারও বাইরে ছিল। তথ্যসূত্র বলতে জীববিদ্যার উঁচু ক্লাসের কিছু বই, কিছু ম্যাগাজিনের কিছু প্রবন্ধ ইত্যাদি। আমাদের স্কুলের লাইব্রেরীও ছিল বলতে গেলে প্রায় বন্ধই। বইয়ের সংগ্রহও সেখানে খুবই সীমিত ছিল।
যাই হোক, এইসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অন্বেষা তৈরী হতে শুরু করলো, ওর আগ্রহ দেখে আমাদের এক দিদিমণি , অরুণিমাদি- উনি মাধ্যমিক স্তরে পড়াতেন ফিজিকাল সায়েন্স আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কেমিস্ট্রি, তিনি উৎসাহিত হয়ে ওকে কিছু কিছু সাহায্য করতে লাগলেন। সেও যৎসামান্যই। আলাদা করে এসব করানোর মতন ব্যবস্থা বা সময় কিছুই আমাদের স্কুলে ছিল না।
নির্দিষ্ট দিনে অরুণিমাদি আর আমাদের স্কুলে নতুন শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেওয়া বিপাশাদি অন্বেষাকে আর ক্লাস টেনের তিথিকে(সেও অংশগ্রহণ করবে স্টুডেন্ট্স সায়েন্স সেমিনারে) নিয়ে রওনা হলেন যে স্কুলে প্রতিযোগিতা হবে সেইদিকে। দুটো মাত্র পিরিয়ড ক্লাস হয়েই সেদিন স্কুল ছুটি কী কারণে যেন, তাই ওদের সুবিধেই হলো। সেমিনার শুরু হবে দুপুর দুটোর পরে।
স্কুল ছুটিই যখন হয়ে গেল, তখন আমার হঠাৎ মাথায় খেলে গেল, আরে, আমিও তো যেতে পারি ওদের সঙ্গে! ওরা রিক্শায় গিয়েছে, কিন্তু আমার তো সাইকেল রয়েছেই, আর ঐ হোস্ট স্কুলও চিনি তো! আমাদের পাড়া থেকে ঐ স্কুলই বরং কাছে। যা ভাবা সেই কাজ, আমিও রওনা দিলাম সেইদিকে। না ঢুকতে দিলে সোজা নাহয় বাড়ী চলে যাবো, আর তো কিছু না! আর দেখতে দিলে দেখবো, সেমিনার হয়ে গেলে সরাসরি বাড়ী চলে যাবো।
যেতে যেতেই ওদের রিক্শাকে দেখতে পেলাম, ওরা পৌঁছনোর কয়েক মিনিটের মধ্যে আমিও পৌঁছে গেলাম। অরুণিমাদি আর বিপাশাদি অন্বেষা আর তিথিদির আমাকেও সঙ্গে নিলেন ঢোকার সময়। আয়োজকদের একজন আমাদের পথ দেখিয়ে দোতলায় একটা ঘরে নিয়ে বসালেন, চমৎকার সুন্দর ঘর, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে মেঘেভরা আকাশ, তখন ঘোর বর্ষা, শরৎ আসতে সামান্য বাকী।
ঐ ঘরে তখন পর্দা টানানো টেবিলক্লথ পাতা ফুলদানি সাজানো এইসব চলছিল, আমরা এতই তাড়াতাড়ি গিয়ে হাজির হয়েছি!
তিথিদি এই স্কুলে এক পুরনো বন্ধুকে দেখে তার সঙ্গে কথা বলতে সামনের করিডরে চলে গেল। বিপাশাদি আর অরুণিমাদি জানালার পাশে দুই চেয়ার টেনে বসলেন। আমি আর অন্বেষা পাশাপাশি বসলাম একপাশের এক বেঞ্চে। অন্বেষার মুখ একটু ফ্যাকাশে, একটু একটু নার্ভাস মনে হয়। পাব্লিক স্পিকিং ব্যাপারটাই একটা কেমন যেন ইয়ে ব্যাপার, ভয় তো হবেই। আমি ওকে সাহস দেবার জন্য নানা ভুজুং ভাজাং বলতে বলতে ওকে হাসাতে লাগলাম।
(চলবে)
Tuesday, July 22, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment