ছোট্টো সেই খাতা, প্রত্যেকটা পাতা হাতের পাতায় ধরে যায়, এত ছোটো। আর সেই কলমটি, ছিপছিপে পাতলা গাঢ় নীল রঙের কলম, গলার কাছে এক চিলতে সোনালীর ঝিকমিক।
কমলালেবুগন্ধী শীত-দুপুরের রোদে পা মেলে দিয়ে সাবধানে খুলি খাতা । পাতাগুলো জীর্ণ, পুরানো, ঝুরঝুরে। কতকাল কেটে গেল ঐ শৈশবের খেলাখেলা লেখাগুলোর পরে? কতবার সূর্যপ্রদক্ষিণ করে এলো পৃথিবী তার অন্তহীন পরিব্রজনের পথে?
পাতায় পাতায় হিজিবিজি ছবি আর লেখা। প্রথমদিকেরগুলো একদম ছোটো ছোটো,একটা দুটো শব্দ, কখনো একটা গোটা বাক্য-কখনো আবার অদ্ভুত কোনো কথা। সেইসব আঁকিবুকি পড়তে পড়তে দুপুরজাগা চোখের মধ্যে ঘনিয়ে আসে অদ্ভুত রাত্রি, সেই রাত্রির বুক ভরে ছড়িয়ে আছে উদাসী নীলজ্যোৎস্না, যে কেবলই হাত বাড়িয়ে ডাকে। কিন্তু ছুঁতে গেলেই আর পাওয়া যায় না।
নীল কলমটি নীলজ্যোৎস্নার ভিতর
একাকী এক ঘোড়ার মতন দাঁড়ায়-
কিশোর পক্ষীরাজ, পিঠে ডানার কুঁড়ি-
সেই কুঁড়িতে বহুদিন শুধু ফুটি-ফুটি ভাব
আর আনচান করানো চিনচিনে ব্যথার ধার,
কিন্তু ডানা ফোটে নি।
একদিন এক অকালবৈশাখীর
তুমুল বজ্রবিদ্যুত-প্রহরের শেষে
সেই কুঁড়ি থেকে ডানা ফুটলো।
অমনি শিকল খুলে গেল পায়ের
ধারালো বাতাসে অস্থির টান।
সেই তখন থেকে হাওয়ার ভিতর দিয়ে
ওর নীলাভ এই একাকী উড়ান-
শুভ্র মেঘেদের পাশ দিয়ে,
দীর্ঘযাত্রার পরিযায়ী পাখিদলের পাশ দিয়ে-
কখনো দিগন্ত গোলাপী হয়ে ওঠে ভোরের স্পর্শে
সেই তখনই আবার কোথাও রক্তসন্ধ্যা আকুল।
বহু নিচে মহাসমুদ্রের আভাস পাওয়া যায়
মাঝে মাঝে মেঘের মিনারে ঝিকমিক করে ওঠে
সূর্যের উৎসবলগ্নের কিছু সঙ্কেত।
দূরে, অনেক দূরে, ঐদিকে রাত্রি
সেইদিকে উদাসীন উড়ে যেতে যেতে
সে ভাবে, সঙ্কেতের অর্থ কি পাওয়া যাবে?
ঐ অনাবিল রাত্রির মণিময় গর্ভের ভিতরে?
Thursday, July 3, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment