তোমাদের বাগানে ছিল পাশাপাশি দুই কৃষ্ণচূড়া 
 সারাবছর শান্ত সবুজ ছায়া মেলে চুপ, 
কেবল বসন্ত এলেই টকটকে লাল ফুল ফুটতো ওদের।
 তুমি বলতে ওরা লালপাহাড়ীর দুই রাখাল 
 দেশে ফেরার পথ খুঁজে না পেয়ে 
গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
 শুধু বসন্ত এলেই ওদের মনে পড়ে
 
 লালপাহাড়ীতে ওদের দেশঘরের কথা,
তাই ওদের মনকেমন করে- 
আর সেই মনকেমন লালফুলের মঞ্জরী হয়ে
 ফুটে উঠতে থাকে ডালে ডালে ।
 
তোমাদের মস্ত ছাদে ছিল দুই পাথরের রাজহাঁস
 তুমি বলতে ওরা জ্যোৎস্নারাতে জ্যান্ত হয়ে 
 উড়ে যায় উত্তরের তুষারঢাকা পাহাড়ে, 
ভোরবেলা কারুর ঘুম ভাঙার আগেই ফিরে আসে,
তুমি নাকি একদিন সকালে
 
 ওদের ডানায় তুষারের চিহ্ন দেখেছিলে । 
আমাদের একটা আশ্চর্য নদীও ছিল
 যে নদীকে কেউ দেখতে পেতো না,
শুধু আমরা জানতাম ঐ নদীর 
 তীরের বালিতে আছে সোনালি স্ফটিক,
 
নৌকো নিয়ে ঐ নদীর উৎসের দিকে গেলে 
 পাওয়া যায় বিশাল এক সোনার পাহাড় ,
আর ওর স্রোতের সঙ্গে নাও বেয়ে গেলে
 পাওয়া যায় পারাপারহীন নীলসমুদ্র ।
 
সেইসব রূপকথা-দিন চলে গেল 
 কল্পনার নদীর স্রোতের মত তরতর করে ।
 তুমি একদিন বিদায় নিয়ে
 দূরে কোথায় চলে গেলে, 
তোমাদের বাড়ী, বাগান সবই বদলে গেল
 কৃষ্ণচূড়া উধাও, রাজহাঁসেরা উধাও-
আমার কল্পনা করতে ইচ্ছে হতো 
 কৃষ্ণচূড়ারা লালপাহাড়ীর পথ খুঁজে পেয়ে 
 সেইখানে চলে গেছে মানুষ হয়ে,
আর রাজহাঁসেরা উড়ে গেছে উত্তরে
 ওদের সেই প্রিয় তুষারশৃঙ্গে।
 কিন্তু ধূলিসংসারের লোহার শলাকা 
 কল্পনার ডানাকে আহত করে, ক্লান্ত করে
 সে উড়াল দিতে পারে না । 
তবু তাকে জল দিই, খাবার দিই
 মাঝে মাঝে স্নান করাই-
তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে তো ! 
নইলে তুমি ফিরে এলে-
কেমন করে তোমাকে শোনাবো 
 যন্ত্রণার রোদ্দুর জমে জমে
 কীকরে ঝিকিমিকি সোনালি স্ফটিক হয়েছে?
ঘুম-ঘুম ব্যথা জমে জমে 
 কীকরে উজ্জ্বল নীল স্ফটিক হয়েছে? 
সন্ধ্যেবেলার বিষাদ-মেঘেরা জমে জমে
 কী করে রক্তপলাশ ভোর হয়েছে?
Tuesday, March 15, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)

No comments:
Post a Comment