মনে করো তুমি চলেছ নদীর উপর দিয়ে, তোমার নৌকা আস্তে আস্তে হেলতে দুলতে এগিয়ে চলেছে। তুমি দেখছ নদীর পাড়ে বসে আছে একটা অদ্ভুতদর্শন দীর্ঘচঞ্চু পাখি, চুপ করে দেখছে তোমায়। তুমি এগিয়ে চলেছ দু'পাড়ে সবুজ দেখতে দেখতে, এ নদীতে জোয়ার ভাঁটা খেলে, মোহনার খুব কাছে কিনা! তুমি শুনছ বাতাসের শব্দ, এখন শান্ত, কিন্তু কেজানে কখন ঝড় আসে? তুমি চলেছ সমুদ্রের দিকে।
একটা জটিল গ্রন্থি, যেটাকে খুলতে পারলেই সহস্র বছরের যবনিকা উঠবে। বছরগুলো যেন শক্ত হয়ে জমে আছে, গিঁট খোলার মন্ত্রটা উচ্চারিত হলেই সব গলে যেতে থাকবে বসন্তের সূর্যের তাপে গলে যাওয়া বরফের মতন। গলে গিয়ে তখন সব স্বচ্ছ, যার ভিতরে দেখা যাবে নদীর তলদেশের নুড়ি পাথর বালি, জলজ আগাছা, এঁকে বেঁকে স্রোতের মতন সাঁতার কাটতে থাকা রুপোলি মাছের ঝাঁক।
অন্ধকার। রাত্রি নেমে গেছে অনেকক্ষণ। সমুদ্রতীর এখন নির্জন। বালির উপরে অবিরাম আছড়ে পড়ার ঢেউয়ের শব্দ শুধু। ঝাউবনের মধ্যে শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।এগিয়ে আসা ঢেউগুলো কেমন জ্বলজ্বল করে, রাত্রির সৈকতে কেমন একটা চাপা আলো। সমুদ্র থেকে বা আকাশ থেকে আসে ঐ আলো।
বিকেলে তুমি দেখেছিলে বালির উপরে পদচিহ্ন, মানুষের, পাখির, কাঁকড়ার। এসব চিহ্ন মুছে যায় একেকটা বড়সড় ঢেউ আসলেই। কিন্তু তোমার মনে পড়ে পাথরের মধ্যে অক্ষয় হয়ে থাকা মিলিয়ন বছরের পদচিহ্ন, বিপুল সরীসৃপরা যা রেখে গেছে। চিহ্ন রয়ে গেছে, তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে সবাই। হয়তো তারা ফিরে এসেছে অন্যরূপে, কেজানে! পৃথিবীর ভাঙা গড়া চলছিল তখন। কী বিপুল ধ্বংস! তার পরে জেগে ওঠে কী বিপুল সৃষ্টি। ঠিকই ভোর হয়, দীর্ঘ রাত্রি শেষে ভোর হয়। জীবন থেমে থাকে না।
তুমি বসেছ এখন আগুনের সামনে, বন্ধুদের সঙ্গে। আগুন ঘিরে গোল হয়ে বসেছ তোমরা সবাই। এখন কালপুরুষ আকাশের প্রায় মাঝখানে, তাকে অনুসরণ করছে তার হরিণমাথা কুকুর, লুব্ধক। তুমি তুলে নাও তোমার পানীয়, চুমুক দাও, একবার, দুইবার। অনুভব করো উষ্ণতা, তোমার ভিতরে এক অদ্ভুত উষ্ণতা। তুমি মাছভাজায় কামড় বসাও, অনুভব করো স্বাদ গন্ধ আর তারও বেশী কিছু। তোমার মনে পড়ে একটা দিন, বহুদিন আগের এক ডুবসাঁতার। নদীটার নাম যেন কী ছিল? চন্দ্রাবতী না?
রাত্রি বহে যায় শান্ত নদীর মত
আকাশে ভেসে থাকা ঘুমেলা চাঁদ
স্বপ্নের ঘোরে এলোমেলো কথা বলে,
জ্যোৎস্নারঙের কথা সব।
এই কি অমরত্বের টুকরোটাকরা?
অনন্তের বৃষ্টিবিন্দু?
সোনালী অগ্নিশিখা লাফিয়ে ওঠে অজস্র সোনালী ফুলের মতন
আলো আর ছায়া হাত ধরাধরি করে নাচছে-
শত শত নীল পদ্মের পাপড়ি খুলে যায় কোথায় যেন
দরজা খোলার শব্দ হয়-
দূর আকাশের প্রান্ত থেকে এসে পৌঁছায় প্রথম সূর্যের আলো-
ভোর হয়ে যায়।
এই কি অমরত্বের স্পর্শ?
এই কি অনন্তের তুষারকণা?
তোমার উষ্ণতা আমাকে ঘিরে ধরে তুলোর পোশাকের মতন,
আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি-
দেখতে দেখতে তলিয়ে যাই গভীরে,
সেখানে দেখতে পাই তোমার রক্তিম হৃদয়,
তার মধ্যে জ্বলছে উজ্জ্বল লাল আগুন
সৃষ্টির শুরু থেকে জ্বলছে অনির্বাণ।
এই কি অমরত্বের স্পন্দন?
এই কি অনন্তের কথামালা?
*******
Friday, August 15, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment