বহু বছর হলো মহালয়া ভোর দেখা হয় না। না, ভুল বললাম, দিনটা আসে ঠিকই। সেই দিনের ভোরও দেখা হয়, কিন্তু সেই শিউলি-উঠান, রাশি রাশি ফুল ঝরতো যেখানে, সেই শীত শীত আলো-আঁধারিতে ভোর চারটেয় বেজে ওঠা আশ্চর্য আকাশবাণীর কল, সেই গান, "বাজলো তোমার আলোর বেণু", আর সেই সব সুর আর কথার ঝর্ণার মধ্য দিয়ে আলো হয়ে ওঠা সেই শরতের স্বর্ণঝরা ভোর, সেই আশ্চর্য কন্ঠটি বলে যে কিনা বলে উঠতো "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর" অমনি ভিতরে বাহিরে ঘটে যেতো এক ম্যাজিক---সেই মহালয়া-ভোর আর আসে না। বহুকাল থাকি শিউলিবিহীন দেশে। কাশফুল আছে, নদীর তীর আছে, শুভ্র মেঘমালা আছে অপরাজিতানীল আকাশে, কিন্তু শিউলি নাই।
শিউলি নাই, অনুও নাই। আসলে আমিই নাই। মনে পড়ে মহালয়া ভোরে অনুহৃয়া আসতো নিয়ম করে, গেটের পাশে ছিলো সেই চেনা শিউলিগাছটা, আমাদের শিশুকাল থেকে আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই যে বড়ো হয়ে উঠেছিলো। পুজোর ছুটির কত দুপুরখেলা ছিলো ওর ছায়ায়। কমলা বৃন্তের সেই কোমল সাদা ফুলগুলো, রাশি রাশি ঝরে পড়তো, হালকা নরম সৌরভ ছড়িয়ে যেতো বাতাসে। ওরা ফুটতে শুরু করলেই আমাদের সকলের মনে শারদীয়া আসতো। রোদ্দুরে শারদীয়া রঙ লাগতো, মাঠ ভরে যেতো কাশফুলে।
" ঢ্যামকুড়কুড় বাদ্যি বাজে ঢাকে পড়লো কাঠি/ যা দিবি মা তাই হবে আজ পরমান্নের বাটি।"
সে শিউলিগাছ হয়তো আজো আছে, হয়তো নেই। আমরা দুজনেই আর সেখানে নেই, ছিটকে কোথায় চলে গেছি দেশকালের স্রোতে।
অন্ধকার বারান্দা পেরিয়ে শিউলি উঠান
সেখানে আবছা ছায়ামায়া-
উঠান পার হয়ে ঘাসে ঢাকা মাঠ,
রাত্রিবাতাসে ঘাসেরা ঘুমিয়ে গেছে।
সব পেরিয়ে আকাশ, তাতে নক্ষত্রের হীরাপান্না।
গত সূর্যাস্তবেলায় যে পাখি উড়ে গেল
তার প্রবাসের অরণ্যের দিকে-
তার চলে যাবার দিকে যেমন চেয়েছিলো
আমার তৃষিত দুইচোখ
এখন তেমনি চেয়ে আছে
অন্ধকারের উপরের ঐ তারাগুলির দিকে।
ছায়াপথের ওড়নার দিকে চেয়ে আমি প্রার্থনা করি
কমলা জ্যেষ্ঠা তারার দিকে চেয়ে আমি প্রার্থনা করি
নীল চিত্রা তারার দিকে চেয়ে আমি প্রার্থনা করি
রাজহংসের পাখা ছাড়িয়ে ছায়াগ্নির দিকে চেয়ে আমি
প্রার্থনা করি-
এ সীমা টুটে যাক-
ঊর্ধ্বে ঐ প্রজাপতিমন্ডলের
ধ্যানমগ্ন ব্রহ্মহৃদয়ে মিলে যাক
এই ক্ষণভঙ্গুর মৃত্তিকাহৃদয়।
Monday, August 25, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment