আমাদের সাথে সাথে আমাদের পথেরাও বহুদূর হেঁটে গেছে, পিছনে বিস্মৃতিধূলি, দিগন্তে মেঘ, রঙীন মেঘমালা।
কেউ ঢুকেছে গলির গলি তস্য গলিতে যেখান থেকে আকাশটাকেই মনে হয় ঐ উপরের কোনো সরু নীল গলি। কেবল পাশের বাড়ির তেতলার ব্যালকনিতে যখন এসে পড়ে আশ্বিনের রোদ্দুর,তখন চমকে ওঠে পথের মন- মনে পড়ে এইসময়ে ক্ষেতের আল থেকে সে দেখতো আর শুনতো দিগন্তলীন মাঠ ভরা সবুজ ধানের নাচ আর গান, বাতাসের সঙ্গে যুগলবন্দী। সে কবেকার কথা?
কেউ গেছে চওড়া রাজপথে, যেখানে সাঁ সাঁ করে ছুটছে কেবল হাওয়াই গাড়ি। দিন রাত ছুটছে ওরা, একের পর এক-ওরা কোথায় যায়? কোনো সন্ধ্যাবেলা, যখন কলাবতীফুলের মতন মেঘে সারা আকাশ লাল-তখন সেই রক্তসন্ধ্যার নিচে সে চিৎকার করে ওঠে, এত রক্ত কেন?
কেউ গেছে পাহাড়ে, পর্বতশীর্ষে উঠবার জন্য ঘুরে ঘুরে সর্পিলাকারে চলছে পাকদন্ডীর মতন। পাশ দিয়ে হয়তো পাগলাঝোরা নামছে, হয়তো হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে নাম না জানা ফুলেরা, হয়তো পাখিরা গান গাইছে, সে শুনছে না, সে শুধু উঠছে আর উঠছে। ঐ যে চূড়া মাঝে মাঝে দেখা যায় মাঝে মাঝে মেঘের আড়ালে চলে যায়, সেইদিকে মন রেখে সে শুধু উঠছে আর উঠছে।
কত সূর্য ঝলকানো দিন কত মিহিন চাঁদের রাত চলে যায়, সে থামে না। একদিন হয়তো কোনো বাঁকে ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে সে নিচে চেয়ে দেখতে পায় ঝম করে উঠেছে কী বিশাল এক সূর্যধোয়া উপত্যকা! অপার্থিব মন্ত্রের মত কী আশ্চর্য সুন্দর! ওখান থেকেই চলতে শুরু করেছিলো নাকি সে? আগে কেন তবে ঐ সৌন্দর্য সে দেখতে পায় নি? এখন তো আর ওখানে ফেরার উপায় নেই!
কেউ নেমেছে আঁধার পাতালে, সেখানে দমবন্ধ অন্ধকার। তারই মধ্যে মধ্যে কোথাও ঝলকে ওঠে আলো। ও কি আলো নাকি আলেয়া? ও কি মণিরত্নের দীপ্তি নাকি ছুরির ঝলক? বোঝার উপায় নেই। পথে ঘুরে ঘুরে চলে আর চলে, দেয়ালে ঠেকে যাবে নাকি সূর্যের নিচে গিয়ে পৌঁছতে পারবে? সে জানে না, সে বুকের মধ্যে এক আকাশ আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে রেখে চলে আর চলে। শেষ কোথায়?
তারপরে কখনো কোনো অলৌকিক মোড় ঘুরে দূরে চলে যাওয়া সেইসব পথেদের দেখা হয়ে যায়।
Friday, August 15, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment