এই গল্পের শুরু হলো আগুনের রঙ ফলানো থেকে৷ বুনসেন আর কির্চফের কাজকর্মের গল্প। দূরের আলোক-উত্সের আলো যেতে দেয়া হলো প্রিজমের (বা গ্রেটিংএর) মধ্য দিয়ে৷ আলোর স্পেকট্রাম পাওয়া গেলো, মানে নানারঙ৷ বাঁদিকে বেগুনী থেকে ডাইনে লাল পর্যন্ত৷ বেগুনী নীল আশমানী সবুজ হলুদ কমলা লাল৷ বাঁদিক মানে কম ওয়েভলেংথ আর ডানদিক বেশী ওয়েভলেংথ৷ আজকালের হ্যান্ড হেল্ড স্পেকট্রোস্কোপে দেখেছি একেবারে স্কেলকাটা থাকে, ন্যানোমিটার ইউনিটে৷ কঠিন উত্স হলে বা ঘন গ্যাস হলে পাওয়া যায় কন্টিনুয়াস, রঙের চওড়া চওড়া ব্যন্ডগুলো পাশাপাশি মিশেমিশে থাকে, রামধনুটি ঝলমলে,লাইনটাইন কিছু থাকে না৷
গ্যাসীয় মৌলকে খুব পাতলা করে অল্প চাপে টিউবে রেখে উপরে নীচে ইলেকট্রোড জুড়ে স্পার্ক মেরে জ্বালানো হলো৷ সেই আলোর স্পেক্ট্রাম ফলিয়ে তো লোকে তাজ্জব! সরু সরু লাইন দেখা যায়৷ বিশেষ বিশেষ ওয়েভলেংথে লাইন! লাল লাইন৷ বেগুনী লাইন!
কী অদ্ভুত! মনে রাখতে হবে তখনো কিন্তু শক্তির কোয়ান্টাম চরিত্র সম্পর্কে লোকের কোনো ভালো ধারনা ছিলো না৷ শক্তি যদি অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, কন্টিনুয়াস হয়, তাইলে এমন লাইন হওয়ার কথাই নয়!
পরে প্লাংক বোর আইনস্টাইন সবাই মিলে লড়ে টড়ে খাড়া করলেন শক্তির বিচ্ছিন্নতার তত্ত্ব৷ শক্তি বিকিরিত হয় কোয়ান্টামে৷ অ্যাটমের নানা নির্দিষ্ট এনার্জী স্টেট থাকে, একটা থেকে আরেকটায় যখন যায় তখন সেই পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে৷ কন্টিনুয়াস যায় না, সাডেন চেঞ্জ হয়৷ এটাকে ইলেকট্রনের কক্ষ থেকে কক্ষে ঝাঁপমারার ছবি দিয়ে বোঝা যায় ভালো যদিও ও ছবিতে লুপহোল আছে৷ (মানে ঝাঁপ দেয় কোথা দিয়ে? দুইকক্ষের মাঝে তো থাকতে পারেনা ইলেকট্রন! তাইলে এক কক্ষে অদৃশ্য হয়ে কি অন্য কক্ষে ভুস করে ওঠে?) তবে মোটের উপর বোঝা গেলো শক্তির এই কোয়ান্টা আইডিয়া দিয়ে লাইনগুলো ব্যখা করা যাবে৷
শুধু এই স্পেকট্রাল লাইন না, আরেকটা জিনিসও খুব বিপদে ফেলে দিয়েছিলো লোকেদের৷ সেটা হলো ফোটো-ইলেকট্রিক এফেক্ট৷কোনো কোনো মৌলের পাতে আলো বা অন্য কোনো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ পড়লে ফটাশ ফটাশ করে ইলেকট্রন ছিটকে ছিটকে বেরোয়৷ দেখা গেলো একেবারে ইন্সট্যান্টলি বেরোয়, একটুও টাইম ল্যাগ থাকে না৷কিন্তু ওয়েভলেংথ খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এক একটা নির্দিষ্ট ওয়েভলেংথের আলো পড়লেই শুধু ইলেকট্রন বেরোয়, নাহলে বেরোয় না,ঘন্টা ধরে আলো ফেল্লেও বেরোয় না৷ দেখেশুনে লোকে বিরক্ত৷শক্তি কন্টিনিউয়াস হলে এরকম মোটেই হোতো না৷
তো, আইনস্টাইন করলেন কি, প্লাংকের কোয়ান্টাম আইডিয়াটাকে নিয়ে ফটাফট এখানে লাগিয়ে দিলেন৷ ছোটোখাটো কতগুলো ইকোয়েশন E=h*frequency, h হলো প্লাংক ধ্রুবক, এই ধরনের সহজ সহজ সমীকরণ দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে আলো বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন নির্দিষ্ট মানে এলে এইরকম হতে পারবে৷ এই কাজের জন্য তিনি বেশ কবছর পরে নোবেল পেলেন৷
Tuesday, March 25, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment