Wednesday, March 26, 2014

ইস্কুলবেলার গল্প(৮)

নিয়তি দিদিমণি গল্প শোনাচ্ছেন, "এক দেশে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজা একদিন এক সাধুর কাছে এক বর পেলেন। রাজা যা ধরবেন তাই সোনা হয়ে যাবে। রাজা তো আনন্দে এক লাফ দিয়ে প্রথমেই দু'হাতে চেপে ধরলেন রাজসভার থাম। থাম সোনার হয়ে গেল। তারপরে ধরলেন ছত্রচামর, তাও সোনার হয়ে গেল। রাজার আনন্দ ধরে না। এরপরে রাজা স্নান করতে যাবেন, যেই না তেল মাখতে গেছেন, তেল হয়ে গেল সোনার তাল। আর তেল মাখা হলো না। বিমর্ষ হয়ে তেল ছাড়াই স্নানে যাবেন ভেবে যেই না গামছা নিতে গেছেন, গামছা হয়ে গেল সোনার পাত। ....."

আমরা জনা কুড়ি ছোটো ছেলেমেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে চোখ বড় বড় করে শুনছি এই কাহিনী। সে কী ঘোর কৌতূহল। কী হবে এর পরে?

পরে বড় হয়ে রাজা মিডাসের কাহিনী প্রথাগত আঙ্গিকে যখন শুনেছি তখন কিন্তু সেই ছোট্টোবেলার রোমাঞ্চ আর ছিলো না। সেই তেল মেখে স্নান করতে যাওয়া বাঙালী মিডাস বরং মনে রয়ে গেছে সেই রোমাঞ্চময় শৈশবের রঙটুকু নিয়ে। তখন যেন সব অনেক বেশী সবুজ ছিলো।

কেজি-ওয়ানে আর কেজি-টুতে পড়াশোনা ছিলো খেলাধূলা গল্পটল্প এইসবের সঙ্গে মেশানো। পরে বুঝেছি খুবই ভালো ছিলো ঐ টেকনিক। দিদিমণিরাও অপ্রত্যাশিত ভালো ছিলেন। পরে জেনেছি অনেক হায়ার ডিগ্রী ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় কিন্ডারগার্টেনে পড়ানো ওনারা বেছে নিয়েছিলেন কারণ এটা ছিলো ওনাদের একধরনের ব্রত। নিয়তি দিদিমণি তো তৎকালীন সোভিয়েত দেশে গিয়ে সেখানে বাচ্চাদের কীভাবে পড়ানো হয় সেও দেখে এসেছিলেন শুনেছি পরে। আমাদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন একগোছা বই, সবাইকে দিয়েছিলেন একটা করে, বইয়ের নাম ছিলো "বছরের কিবা মানে", সুন্দর সুন্দর ছবি দেওয়া ছড়ার বই, অনুবাদ। তখন এতশত জানতাম না, বই পেয়েই খুশি।

সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হতো ক্লাস। তার আগে বাইরে উঠানে সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে হাতজোড় করে দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকতে হতো, তারপরে শুরু হতো প্রার্থনাসঙ্গীত, একজন বড় ক্লাসের দিদি লীড করতো, আমরা তার সঙ্গে কোরাস ধরতাম। আমাদের সময়ে গাইতে হতো "ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।" পরে মানে বশ কয়েক বছর পরে সরকারী নির্দেশে সেই গান বন্ধ হয়ে গেল, তার বদলে গাইতে হতো জাতীয় সঙ্গীত, "জনগণমন অধিনায়ক জয় হে "

একেবারে প্রথমদিন তো আর গানের কিছুই জানি না, মানে গান যে শুরু হবে তাই তো জানি না! হাতজোড় করে চোখ বন্ধ করতে বললো নীলিমা দিদিমণি, ব্যস, তাই করলাম। সেদিন চারিপাশে কত বাচ্চা, কাউকে চিনি না, সব নতুন, তারস্বরে কেউ কেউ চিৎকার করছে, কেউ হাপুস নয়নে কাঁদছে, কেউ কেউ চুপ করে এসব দেখছে। সেদিন প্রথম কিনা মাকে ছেড়ে এসেছে সবাই, তাই। প্রথম অভিজ্ঞতা বাইরের জগতের। নীলিমা দিদিমণি এক হাপুস-কাঁদা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বলছে, "এত কাঁদলে হবে কী করে? তাহলে যে ভগবান আসবে না।"

একসময় গান শুরু হলো, আমি চোখ আর মুখ কিছুই খুললাম না। কান খোলা রইলো। গান শেষ হলে একেবারে চোখ মেললাম। তারপরে প্রথম ক্লাসে ঢোকা।

দরজার পাশে জুতা রাখার জায়গা, সেখানে জুতা খুলে সুটকেস আর জলের বোতল হাতে ক্লাসঘরে ঢোকা। ঘরটা বেশ বড়ো, কোনো বেঞ্চ নেই। ঘর জুড়ে চাদর পাতা। সামনের দিকে দিদিমণির চেয়ার, কোনো টেবিল নেই, পাশে একটা কাঠের ‌স্ট্যান্ডে ছোটো একটা কালো বোর্ড। ঘরের দেয়ালগুলোর কাছে বড় বড় আলমারি, সেই আলমারির সামনের কাচের ঢাকনার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে কত কত রঙীন খেলনা, পুতুল, হাতীঘোড়া, কাপপ্লেট এইসব। আহা আমাদের নিশ্চয় খেলতে দেবে কখনো।

চাদরে বসতে হয় আর সুটকেস সামনে রাখতে হয়। জলের বোতল গুলো সব দিদিমণি একপাশে নিয়ে রেখে দেন। সকাল থেকে টিফিনের আগে পর্যন্ত পড়াশোনা। অ আ ক খ এ বি সি ডি এক দুই তিন চার এসব শিখতে হয় আরকি। তারপরে ছড়া গল্প এসবও হয়। কোনো কোনোদিন খেলনাগুলো বার করে দেন দিদিমণি, আমরা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে খেলি। তারপরে বেলা দেড়টায় ঢং ঢং ঢং করে টিফিনের ঘন্টা পড়ে গেলেই পড়াশোনা গোটানো। টিফিন ইস্কুল থেকেই দিতো, ইস্কুলেরই বাটিতে, কোনোদিন মুড়ি-বাদাম, কোনোদিন খই-পাটালি, কোনোদিন মাখনচিনিপাউরুটি, কোনোদিন বা অন্যকিছু।

খাওয়ার পরেই বাটি জমা দিয়ে যে যার জলের বোতল থেকে জল খেয়ে খানিকটা খেলা বাইরের উঠানে। একপাশে দোলনা আর স্লিপও ছিলো। তারপরেই একটা ঘন্টা পড়লে ঘরে ঢোকা আবার, তখন আবশ্যিক ঘুমের ক্লাস। সুটকেস গুলো একপাশে সরিয়ে রাখা হতো আর চাদরে শুয়ে পড়তে হতো টানটান হয়ে। ঘুমের চেষ্টা করতে হতো, ঘর প্রায় অন্ধকার, শুধু বন্ধ জানালার ছোটো ছোটো ফোকড় দিয়ে আসা আলোর বাতাসা। ঘরখানা হয়ে যেতো মায়াপুরী। এর মধ্যে কি ঘুম আসে? আমরা ফিসফিস করে পাশের জনের সাথে গল্প করতাম। তবে কেউ কেউ কোনো কোনোদিন ঘুমিয়ে পড়তো সত্যি করে। আমি নিজে হয়তো দুই বছরে দিন তিনেক ঘুমিয়েছি।

এইভাবে বেলা সাড়ে তিনটে অবধি ঘুমের ক্লাস চলতো, তারপরে আবার ঘন্টা ঢং ঢং ঢং, ছুটি ছুটি। যে যার সুটকেস নিয়ে বেরিয়ে জুতো পরে রিকশা করে বাড়ী। আহা বাড়ী বাড়ী। তারপরে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে দেয়েই মাঠে। সেখানে একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা, খেলা, খেলা। খোলা মাঠে খোলা আকাশের নিচে চারিদিকে কোনো বাধাহীন খেলা।

কিন্ডারগার্টেনের দুটো বছর কেমন ফুরফুর করে কেটে গেল। কত গল্প কত খেলা আর আর তার সাথে কিছু লেখা আর পড়া। কিন্ডারগার্টেনে দিব্যি আমরা বাংলা অঙ্কের সঙ্গে ইংরেজীও শিখতাম । কী সুন্দর বাংলা- ইংরেজী মেশানো মজার ছড়া আর ছবিওয়ালা বই ছিলো, মজা করে করে শেখা হতো কাকে কী বলে।

একটা ছবি মনে পড়ে, এক চালাক বানর বসে আছে ঘোড়ার পিঠে, সামনে এক গাধা, বানর তাকে বলছে সে বনে যাচ্ছে মধু খেতে, গাধাও যেন যায়।

"Donkey কে কহিছে Monkey

এসো মোর সনে,

Pony চেপে Honey খেতে

যাবো আমি বনে।"

সুন্দর সব রঙীন পরিপাটী ছবিওয়ালা বই, যত্ন করে পড়ান দিদিমণিরা, ধৈর্য ধরে শেখান মায়ের মতন স্নেহে ও যত্নে। শিশুদের শিখতে আর কী লাগে?

তারপরে ক্লাস ওয়ান থেকে সব বদলে গেল, ক্লাসে কেঠো কেঠো বেঞ্চ পাতা, ইংরেজী বাদ। বাকী যা সব পড়া হবে তার জন্য সরকারী বই আসে, সেই বই সেলাই খুলে লড়লড় করছে, কোনো কোনোটা ময়লা আর ছেড়া, সবচেয়ে খারাপ হলো বই ভর্তি পেন্সিলের লেখা, আগেকার ছাত্রগণের শূন্যস্থান পূরণ বা প্রশ্নের উত্তর এইসব। সেগুলো ইরেজার দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হয়। সারা ক্লাসে শুরুর দিকে কেবল বই মোছাই হয়। আর সবচেয়ে দুঃখদায়ক হলো দিদিমণিরা একেবারেই সেই কেজি ক্লাসের শিক্ষাব্রতী দিদিমণিদের মতন না। দায়সারা পড়ানো। কিন্ডারগার্টেনের পরে ঠিক যেন গণতান্ত্রিক অবস্থা থেকে একেবারে মিলিটারি সরকারে এসে পড়লাম আমরা।

বইগুলোও সব কেমন যেন, ছবি নেই রঙ নেই। সহজপাঠ বলে যে বাংলা বই সেই বইয়ে অদ্ভুত হিজিবিজি টাইপ ছবি সব, একটুও মন টানে না, ইচ্ছেই করে না একবারের বেশী দু'বার ওগুলো খুলতে। গল্প ছড়া সবই কেমন একটা অচেনারকমের আড়ষ্ট। সরকারী অঙ্কের বই নবগণিত মুকুল, সেও ভালো লাগে না। এইসবই হয়তো ভালো লাগতে পারতো যদি শিক্ষিকারা একটু কল্পনা একটু সৃষ্টিশীলতা দিয়ে ক্লাসগুলো উপভোগ্য করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দুঃখের কথা সেরকম কিছুই দেখা গেল না।

এদিকে আবার ওদিক নেই সেদিক আছে দিদিমণিদের, একেক জন দিদিমণির ছেলে বা মেয়ে ও সেসময় পড়ত আমাদের সাথে, তারা তো দিব্যি বাকী দিদিমণিদের ফেভারিট। নিজের মায়ের কাছে পরীক্ষা দিলে তো অবশ্যই পঞ্চাশে পঞ্চাশ বা একশোতে একশো। সে নাহয় হলো, স্বয়ং যুধিষ্ঠিরই নিজের বাবার কাছে ( যদিও যুধিষ্ঠির জানতো না যে প্রশ্নকারী ওর বাবা, যক্ষ বা বক রূপে ধর্ম ছিলেন হ্রদের তীরে ) মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে ১০০ তে ১০০ পেয়ে গেল, আর আমরা তো সামান্য মনুষ্য। হাসি কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ট্রীটমেন্টটাই খারাপ লাগতো, ছোটোরা এসব বুঝতে পারে না তা তো না, বরং ছোটোবেলা এসব জিনিস আরো বেশী ভালো করে বোঝা যায়।

এভাবে গেল আরো দুটো বছর, তারপরে ক্লাস থ্রীতে দেখা পেলাম আশ্চর্য সেই মায়াভরা চোখের দিদিমণির। মানুষই যে ম্যাজিক করতে পারে, যন্ত্রপাতি বইপত্তর টাকাকড়ি এসব যে বস্তুমাত্র, সেই ধারণা সারাজীবনের মত আমার হলো ক্লাস থ্রীর ক্লাস-টিচার এই দিদিমণির জন্য। মানুষের প্রেরণাই জাগিয়ে তুলতে পারে স্ফুটনোন্মুখ মনের কলিগুলিকে। ওনার হয়তো আজ সেসব কিছুই মনে নেই। উনি জানতেনও না ছোট্টো একটা মেয়ে প্রত্যেকটা দিন সকালে চোখ মেলেই মনে করতো তার মুখ, ইস্কুলে গেলেই তার দেখা পাবে সেটা ভেবেই খুশি খুশি লাগতো সেই মেয়ের।

তখন সহজপাঠের ঝামেলাও আর ছিলো না, কিশলয়ের বাংলা গল্প আর ছড়া/কবিতা, নবগণিতমুকুলের অঙ্ক, আর বাকী বাড়তি যা কিছু, সব তার ভালো লাগতে থাকলো কেবল দিদিমণির পড়ানো ভেবেই, এমন সুন্দর ছিলো তার পড়ানো। সেই দিদিমণিই তার প্রথম গুরু। যিনি জ্ঞানাঞ্জনশলাকা দিয়ে মনের চোখ খুলে দেন তিনিই তো গুরু।

অল্পবয়সী দিদিমণি, ওনার নিজের মেয়েটি তখন মাত্র এক বছর বয়সের। প্রতিদিন ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়লে নাম ডাকার খাতা আর কলম হাতে দিদিমণি আসতেন। আগের দু'বছরের ক্লাসে যে মুহূর্তটা সবচেয়ে বিশ্রী লাগতো, এই দিদিমণির যাদুমন্ত্রবলে সেই মুহূর্তটাই হয়ে উঠেছিলো আমার সারাদিনের মধ্যে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত। "আসছে, সে আসছে। "

সাধারণ হালকা রঙের সুতীর শাড়ী পরা, স্নান করার পরে ভেজা চুলগুলো একটা আলগা গেরো দিয়ে আটকিয়ে পিঠের দিকে মেলা। কোনো অলঙ্কার নেই, কপালে লাল টিপও না। খুব নরম, কিছুটা বিষাদমাখা মুখ। নরম গলায় কথা বলতেন, কোনোদিন খুব বিরক্তির মুহূর্তেও গলা তুলে জোরে ধমক দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। অথচ ক্লাসের মধ্যে একসাথে প্রায় ত্রিশ / পয়ত্রিশটি বাচ্চা, কোনো কোনোটা তো রীতিমত বিচ্ছু। দিদিমণির কিন্তু ধৈর্যচ্যুতি দেখি নি কখনো। ওনাকে দেখলেই কেন যেন কোনো এক মায়ের কথা মনে হতো, কারুর একার মা না, অনেকের মা, যেমন মা সারদা, যেমন মা টেরেসা। এমন একজন, যাকে ভরসা করা যায়, যার কথা শুনতে আর মানতে ইচ্ছে করে। মানতে হবে বলে নয়, মানতে ভালো লাগে বলে।

পরে জেনেছিলাম এরই কিছুদিন আগে এই দিদিমণির স্বামী অকালে মারা গেছিলেন ভুল চিকিৎসায়। সেই ভদ্রলোক কাছের এক হাইস্কুলে টিচার ছিলেন, খুব ভালো শিক্ষক বলে নামডাক হতে শুরু করেছিলো। কিন্তু সেই সময়েই এই বিপর্যয়। দিদিমণি তখন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই চাকরিটি পান অস্থায়ী শিক্ষিকা হিসাবে, প্রথম কয়েক বছর প্রাইমারিতে পড়িয়ে পরে বদলি হয়ে যান দূরের এক হাইস্কুলে। সারাজীবন একলাই কাটালেন, সন্তানটিকে মানুষ করলেন একলাই।

এর বেশ কয়েক বছর পরে যখন প্রথম জানতে পারলাম মাদাম কুরী আর পিয়ের কুরীর কথা, দেখলাম তাদের ছবি, বর্ণনা পড়লাম পিয়ের কুরীর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর, বর্ণনা পড়লাম মাদাম পড়াচ্ছেন ফরাসীদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, তখন আশ্চর্যভাবে সেই অচেনা বিদেশী পরিমন্ডল মুছে গিয়ে মাদামের মুখের জায়গায় ফুটে উঠলো আমার সেই দিদিমণির বিষাদকোমল মুখটি। এইভাবেই দেশকালে আবদ্ধ আমরা হয়তো আমরা স্পর্শ করে থাকি দেশকালের বাইরের কোনো ব্যপ্ত সত্যকে। কে বলতে পারে?

সেই সময়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো জানুয়ারী মাসের দুই তারিখ থেকে। মানে ইংরেজী বছর শুরু হবার সাথে সাথেই। ক্লাস থ্রীর ক্লাস শুরু হবার কিছুদিন পরেই শুরু হয়ে গেল আরেক সাজো-সাজো রব, বিরাট পুরস্কার বিতরণী উৎসব হবে, সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগের চার বছর হয় নি, সব পেন্ডিং পুরস্কারগুলো একসাথে দেওয়া হবে, তার জন্য দিদিমণিরা সব পুরানো আর্কাইভ উল্টেপাল্টে সন্ধান করছেন, তালিকা তৈরী করছেন, স্কুলের পরে অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।

তার চেয়েও বেশী সক্রিয় কর্মকান্ড চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। সেই যে প্রাইমারি সেকশনের বেশীরভাগ শিক্ষিকার কথা বলছিলাম, তাদের নাচে আর গানে উৎসাহ বিরাট। তারা তো রীতিমত নাচের দল বানিয়ে ফেললেন প্রাথমিক স্ক্রিনিং টেস্ট নিয়ে, আর গানের জন্য আরেকদল নির্বাচিত হলো। কোরাসের জন্য একরকম স্ক্রিনিং টেস্ট, প্রধান গানগুলোর জন্য যাদের একলা কন্ঠদান, তাদের নির্বাচনের টেস্ট আলাদা, খুব চৌখোশ গাইয়ে চাই।

প্রধান অনুষ্ঠান পরীদের নাচ, সেই পরীরা আবার নানা রঙের, দু'জন দু'জন করে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ আর সাদা পরীরা। সিমেট্রিকালি নাচবে রাজকুমারীর দুইপাশে। আহা আগে জানলে তো সেইখানেই খানিকটা শিখে ফেলতে পারতাম স্পেকট্রাম অ্যানালিসিস।

সে এক এলাহী কান্ড, কী রিহার্সালের ধূম। আমরা যারা কিনা নাচগান শিখতাম না, তারা দর্শক, বড় বড় চোখ করে দেখতাম ক্লাসের পরে। এসব আগে তো দেখিনি কিনা!

(চলবে)

No comments: