Saturday, June 21, 2014

জ্যোৎস্নাশিহরিত

সারাদিন এখান থেকে ওখান, অল্প অল্প বিরতি দেওয়া ঘোরাঘুরি, অনিশ্চয়তার সঙ্গে ইচ্ছেখেলা। তারপরে ক্লান্তিসন্ধ্যা। সরাইয়ে ঘর নিয়ে নেয়ে খেয়ে বিশ্রাম। চিরল ঘুমিয়ে পড়েছে।

ঘুমের সাধনায় বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ব্যর্থ হই। বেশী ক্লান্তিতে স্নায়ু টানটান, ঘুম আসে না। উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়াই, পর্দা সরিয়ে তাকাই বাইরে। জ্যোৎস্নাশিহরিত মধ্যরাত।

বালিময় শুখা দেশ, দূরে দেখা যায় পাহাড়ের আবছা রেখা। বালিপাহাড়। আকাশ এখানে ভারী পরিষ্কার। এই বালিতে পাহাড়ে মাটিতে এমনকি বাতাসেও কেমন ঝিমঝিমে রহস্যময়তা। হাজার হাজার বছরের রহস্য।

মনে হয় কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলে রাতবাতাসে। কে যেন ডাকে তুরা, তুরা, তুরা-আ-আ-ই। কে ডাকে? কেন ডাকে? কেন আবছা আবছা চেনা চেনা লাগে? কেন সারাদিন অচেনা অচেনা বাঁকে চমকে উঠেছি চেনা চেনা লেগে?

ইচ্ছেগাছে উড়ে বেড়ায় পরী
ঘুমিয়ে গেছে সাতপাহাড়ের বন
জোছনা রঙের ওড়নাগুলো নিয়ে
একাই খেলে না-ঘুমানো মন।

দূরের জলে ঘাই তোলে রাতমাছ
জলকলিটি স্বপ্নে কথা বলে,
মরূদ্যানের ঝর্ণা-পাহাড়-হাওয়া
আধেক নেশা আধেক ঘুমে ঢলে।

চিরল বুঝবে না,সে আমাকে অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ বলে জানে। ঠাট্টা করে এই নিয়ে। বলে কাজের পক্ষে নাকি ক্ষতিকর এত কল্পনাপ্রবণতা। আমিও মেনে নিই, যথাসম্ভব লুকিয়ে রাখি এসব ওর কাছ থেকে।

আমাদের কাজের পদ্ধতি, হিসাব করা, মাপ নেওয়া, গণনা এসবে মিল আছে বলে আমাদের কাজ এগিয়ে চলে, কিন্তু কেউই কি আমরা সত্যি করে কাউকে বুঝতে পারি? মনের ভিতরের যে লুকানো মন, যে কিনা অন্যভাবে বুঝে নেয় সব, সে মনের হদিশ কি কেউ জানি?

ঘুমের পর্দাঘেরা অচিন দেশের নির্জন মধ্যরাতে মনে পড়ে যায় সেই পাগল বাঁশিওয়ালাকে, দখিন হাওয়ায় সারারাত যার বাঁশির সুর ভেসে আসতো! সে কোথায় আজ? কতদূরে?
আমরা দু'জন একটি গ্রহেই থাকি
মধ্যে শুধু একটি মহাসাগর
একই আকাশ-চন্দ্রাতপের নিচে
জীবনখেলায় কুটোকাটার ঘর।

No comments: