মনে পড়ে স্বপ্নের সেই মেঘমানুষকে, যে ভেদ মানতো না, বলতো পৃথিবী তার মা আর আকাশ তার পিতা, বলতো সে ভালোবাসে আলো, ভালোবাসে নদী যার মধ্যে কিনা পূর্বজ-পূর্বজাদের আশীর্বাদধারা বয়ে গেছে। বলতো, সে ভালোবাসে সবুজ গাছ, পশুপাখি। বলতো, সে ভালোবাসে অন্য মানুষদের। সে বলতো সে ঘৃণা করে নিষ্ঠুরতা আর ঘৃণাকে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- কে তাকে রক্ষা করে? সে বলেছিল, কেউ না, জলের মধ্যে জল হয়ে ঝরে যায় সে। তার কাছে আরো কত কথা ছিলো জানার, কিন্তু ঘুম ভেঙে গেল যে!
জেগে উঠে মনে পড়ে আরেক মানুষকে, একদিন তাকে যুবক দেখেছিলাম, আজকে সে বুড়া হয়ে গেছে। তখনই তার চুল খুব পাতলা হয়ে গেছিল, এখন মাথাজোড়া মস্ত টাক। আমি খুঁজে বার করেছিলাম তার ম্যাট্রিকের সময় তোলা সাদাকালো ছবি, এক উজল চোখের কিশোর, যার মাথা ভর্তি চুল। সেই অমলকান্তি কিশোর অত বদলে গেছে? সময়ের মধ্যে পিছন ফিরে গিয়ে পিছনবাগে সাঁতার দিতে দিতে আর ফিরে পাওয়া যায় না সেই কিশোরকে?
অথবা সেই যুবককে যে ছোট্টো মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে রবিবারের সকালের বাজারে? এক অদ্ভুত ফলের বাজার বসেছে রেললাইনের উপরে, বাচ্চা মেয়েটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ট্রেন এলে কী হবে? ফলওয়ালা হা হা করে হেসে বলে," ট্রেন আইলে চাপা পইড়া সবাই মইরা যামু, আবার ট্রেন চইলা গেলেই বাঁইচ্যা উঠমু! এইরম কইরাই তো রোজ রোজ আমরা মইরা যাই আর বাঁইচ্যা উঠি।"
আশেপাশের সবাই গলা ছেড়ে হেসে উঠেছে আর ভীষণ রকম কনফিউজড হয়ে গিয়ে মেয়েটা পাশে বাবার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে, " তাই, বাবা?" হাঁটতে হাঁটতে ফলের বাজার পার হয়ে যায় তারা, মেয়েটাকে বাবা আশ্বস্ত করে, "এই লাইনে খুব ভোরে শুধু একবার মালগাড়ী যায়, সারাদিন আর কোনো গাড়ী যায় না।"
মেঘমানুষ বলে, "এ কী আশ্চর্য ব্যাপার! আকাশ, মাটি এসবও কি কেনাবেচা করা যায়? আমরা বুঝিনা! এই যে বিশুদ্ধ বাতাস বইছে- প্রাণের দীপগুলি জ্বালিয়ে রাখছে-এই যে স্নিগ্ধ জল কুলকুল করে বয়ে যায় রোদপোহানো পাথরের পাশ দিয়ে, আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখে এই জল-এসব তো আমাদের সম্পত্তি না। এগুলো কী করে কিনবে বা বেচবে কেউ? পৃথিবীর প্রত্যেকটা জায়গাই পবিত্র, পাইনের ঝিরিঝিরি পাতাগুলো, সব বালুকাতীর, বনের কুয়াশা, সব তৃণভূমি, সব কীটপতঙ্গ! এরা সকলেই আমাদের স্মৃতি আর অভিজ্ঞতায় পবিত্র।"
ঝড় এসেছে তা তো ভাবিনি তবু
জানালাটি খুলে চেয়ে দেখেছি-
বুক ভরে টেনে নিয়েছি বৃষ্টিগন্ধী হাওয়া,
ঐ হাওয়ার গন্ধ তোকে মনে পড়ায়।
খোলা চুলে মেখেছি সেই হাওয়ার আদর
চুপি চুপি কথার মতন কানের
লতিতে ছুঁয়েছে হাওয়ার হাত।
খুব বৃষ্টি হয়ে গেল সারাটা দুপুর
সঙ্গে ঝিলিক দেওয়া বিদ্যুৎ আর কড়কড়াৎ বাজ-
অঝোর বরিষণ চললো ঝরোঝর।
এখন বিকেল, বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ আগে-
খোলা জানলা দিয়ে ভেসে আসে জুইঁফুল-গন্ধী হাওয়া,
বাগানের কুঁড়িগুলো ফুটেছে বৃষ্টির ছোঁয়ায়।
মাঠে পথে উঠোনে জমে থাকা জলে
মুখ দেখছে আকাশ-
দেখছে তার দ্রুত বদলে যেতে থাকা চেহারা,
বৃষ্টিশেষ মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে,
আকাশ নীল হয়ে আসছে
আমার প্রিয় নীল রুমালটার মতন।
কবে হারিয়ে যাওয়া সেই রেশমী রুমাল-
শৈশবের কুসুম কুসুম গল্পগুলো জড়িয়ে নিয়ে
কোথায় চলে গিয়েছে নিরুদ্দেশের দেশে।
শুধু মনে আছে ওর রঙটা,
আকাশের মত নীল।
তোর মনে আছে কি
এইরকম বৃষ্টিশেষ বিকেলে
একদিন আমরা দেখেছিলাম ছোট্টো গর্তে
জমে থাকা জলে একজোড়া চড়াইয়ের কাকস্নান?
এখন আমি একাই দেখছি
উঠোনে জমা জলে স্নান করছে শুভ আর রূপসা
আমার টালির ঘরে বাসা বাঁধা চড়াই দুটির
ঐ দুটি নাম দিয়েছি।
*******
Sunday, May 25, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment