মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়ী ফেরার পথ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না, এদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার দিকদিগন্ত আচ্ছন্ন করে নেমে আসছে ঘুম-আসা চোখের পাতার মত। পথ খুঁজে আর কী করে পাবো, আলো থাকতে থাকতেই পেলাম না, এখন এত অন্ধকারে কী করে আর....
একেকসময় মনে হয় হাল ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ি গাছতলায়, বৃথা পথ না খুঁজে অপেক্ষা করি বরং। যার দরকার সেই আসবে আমাকে খুঁজতে, "পথ আমারে সেই দেখাবে যে আমারে চায়/ আমি অভয় মনে ছাড়বো তরী সেই শুধু মোর দায়....."
কিন্তু পারি কই? এত সহজ না ভরসা করা, এত সহজ না চুপ করে বসা, অপেক্ষা খুব কঠিন পরীক্ষা। তবু মানুষকে এত অপেক্ষা করতে হয় কেন? ভালোবাসার অপেক্ষা, আরোগ্যের অপেক্ষা, শান্তির অপেক্ষা, পরিত্রাণের অপেক্ষা.....
জীবনের পরীক্ষাগুলি চিরকালই কি এইরকম? এত নিরাসক্ত নির্বিকার! যন্ত্রের মতন পাথরে ঘষা দিয়ে দিয়ে দেখে যাচ্ছে শুধু কী রেখা পড়লো নিকষের গায়ে? আগুনে ছুঁড়ে দিয়ে দেখছে কতটা খাদ? ঘূর্ণীজলে ছুঁড়ে দিয়ে দেখছে ডোবে কি ডোবে না? কেন? আমরা কি তার হৃদয়ের কেউ নই? তাই কি সে হৃদয়ের কাছে নিয়ে,খুব কাছে নিয়ে দেখে না দপদপ করে জ্বলে ওঠে কিনা চোখের মণিদীপ, রিনরিন করে বেজে ওঠে কিনা না-দেখা চিকন তারগুলি? সে কি শুধু এক্সপেরিমেন্ট করে চলে বিনা ভালোবাসায়? সে কি শুধু পর্যবেক্ষক, সে কি নিজে সুখে মর্মরিত হয় না বাসন্তী বনের মতন, সে কি অশ্রুতে ঝলোমলো হয় না শ্রাবণের মেঘপরিপূর্ণ আকাশের মতন? তাহলে এত আলো এত রঙ এত সব অপরূপ সূক্ষ কারুকাজ এত হাসি এত নিবিড় বেদনার পরম পুলক সবই কি বৃথা? কিছুই তাকে ছুঁতেও পারে না?
তাহলে জ্যোৎস্নায় আকুল নির্জন বনভূমির মধ্যে একলা মানুষটির কানে কানে কে বলে,"আরেকটু এগিয়ে যাও, আরেকটু এগিয়ে যাও ঐদিকে, পথ পাবে।"
তাহলে মৃত্যুসিন্ধু পার হতে হতে জীবনের এক এবং একমাত্র পরমাকে হারিয়ে ফেলা তরুণের কানে কানে সঞ্জীবনীর মতন কে বলে,"আশা হারিও না ছেলে, ক্ষণিকের জন্য যাকে হারিয়েছ, অনন্তকালের জন্য তাকে ফিরে পাবে। এতো বাঁকটুকু মাত্র পার হওয়া,বেয়াল্লিশ বছর আর এমন কি? " দশকের পর দশক অশ্রু গোপণ করতে করতে ক্লান্ত কঠোর অবিশ্বাসী ছেলেটি হঠাত্ হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাহলে কেন বলে,"আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।"
তবে? তবে কেন হিসাব মিলতে চায় না? কেন তবে সূর্যপিয়াসী তরুণ গাছেদের মতন সেইসব মানুষের কথা মনে পড়ে যারা আর কোনোদিন পৌছাতে পারলো না তাদের যৌবনের উপবনে? বারুদে, ধোঁয়ায় সব কালো হয়ে গেলো? আকাশ ঢেকে গেল ভস্মে? কী ভয়ানক অভিমানে?
তবু শঙ্খনদীর তীরে তাদের প্রিয়তমেরা প্রিয়তমারা একদিন হয়তো ঠিকই গিয়ে দাঁড়াবে মোমজ্যোৎস্নায়,সব বিরহ-অনল মুছে যাবে চিরমিলনের আকুল বর্ষায়। আলোর দরিয়া পার হয়ে আরো আরো আলোর মধ্যে।
Thursday, May 22, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment