Sunday, March 8, 2009

জন্মজমিন

ওরে বাবা, ওরা !! ওরা!!!!

তিয়া আর তিশা গল্প শোনে বুড়ামানুষটার কাছে বসে, ঐ দূরে নীল-সবুজ গাছের রেখা টানা গাঁয়ের সীমা, তার বাইরে তারা দেখেছে বাজারের কাছে ইস্টিশান আর সেইখানে আসে লক্করঝক্কর ট্রেন। সেই ট্রেনে চেপে বাবাকাকারা রোজ যায় কাজে। তারা ইস্কুলে যায় রিকশা করে, সে ইস্কুল গাঁয়েই। কখনো কখনো তারা বাজারের কাছের বাসে চড়ার জায়গা থেকে বাসে উঠে বেড়াতে যায় মামাবাড়ি।

কিন্তু এইসবের বাইরে অনেক দূরে, অনেকবার ট্রেন বাস নৌকাবদল করে যাওয়া যায় এত দূরে নাকি ছিলো তাদের দেশ। বুড়ামানুষটা বলে সেই দেশ থেকে তারা সবাই চলে আসলো নৌকা বাস ট্রেনে করে। তিয়াতিশারা তখন জন্মায় নি। চলে আসলো তাদের মাবাপদাদাপরদাদারা।

চলে আসলো কেন? বড় বড় চোখ করে জানতে চায় তিয়া। বুড়ামানুষটা চোখেমুখে ভয় ফুটিয়ে বলে,"ওরে বাবা, ওরা!" ওরা কারা?

তিয়াতিশারা ঠিক মতন বুঝতে পারে না। শোনে ওরা নাকি খুব ভয়ানক, ওরা নাকি ধারালো অস্তর নিয়ে ছুটে আসতো অদ্ভুত সব শব্দ বলতে বলতে,ওরা নাকি কত মানুষ মেরে ফেলেছে, দাউদাউ আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ী। তিয়া ভাবে তাহলে কি ওরা মানুষ নয়, অন্যকিছু? তাদের ভয়েই কি মানুষেরা পালিয়ে আসছিলো? মনের চোখে সে দেখে দলে দলে মানুষ খালিপায়ে দৌড়ে দৌড়ে পালাচ্ছে,ছোটোদের নরম হাতগুলো বড়দের গিঁঠেপড়া হাতের মধ্যে আটকে আছে,যত জোরে সাধ্য ততজোরেই তারা দৌড়ায়। চারিদিকে ভয়ের ছবি। ওদের পিছনে যারা তাড়া করে আসছে সেই "ওরা"দের মনে মনে দেখার চেষ্টা করে ভয়ে ভয়ে থেমে যায় সে। ওরে বাবা, ওরা!! দরকার নেই দেখে।

তিয়ারা বড় হয় আস্তে আস্তে, গাছগাছালির গন্ডীটানা গাঁয়ের ইস্কুল আর তাদের ধরে রাখতে পারে না। আগে যে ট্রেনে তারা বাবাকাকাদের রোজ যেতে দেখতো, তাদের সেই ট্রেনেই চড়ে রোজ যেতে হয় তিন স্টেশান পার হয়ে।

(Cont.)