Monday, July 13, 2009

ঊষাসন্ততি

আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথটার উপর দিয়ে সাবধানে গুহার সামনের পাথুরে চাতালে উঠে এলাম। মস্ত সেই ধূসর পাথরটা! দুখন্ড হয়ে ভেঙে আছে। পাথরটার সামনে গিয়ে বসে পড়লাম, ঝুঁকে পড়ে আমার লোমশ হাত বাড়ালাম ওটার দিকে। এখনো ওটার গায়ে লালচে-বাদামী দাগগুলো জেগে আছে। কুশ আর খুমানের গতকালের লড়াইয়ের চিহ্ন!

আমি ওদের যুদ্ধের সাক্ষী। আবছাভাবে মনে করতে পারি খুমানকে কুশ এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, খুমান হুমড়ি খেয়ে পড়লো পাথরটায়। কুশের পাথরের হাতুড়ী খুমানের মাথা গুঁড়িয়ে দিতে লাফিয়ে উঠল, ঠিক সময়ে খুমান মাথা সরিয়ে নিল, পাথর দুখন্ড হয়ে গেল হাতুড়ীর ঘায়ে। কী অদ্ভুত সেই পাথরভাঙার আওয়াজ! তারপরে কি হলো? কখন খুমান মরে গেল? নাকি সে পালিয়ে গেল?

আমাদের স্মৃতিশক্তি অল্প, খুব স্পষ্ট করে সবকিছু মনে করতে পারি না আমরা। কোনো কিছু হারানোর দু:খে দীর্ঘ শোক করার ক্ষমতা নেই আমাদের, আমাদের দুর্বল স্মৃতি দ্রুত সব ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছি।

কখনও কখনও আমরা শান্ত হয়ে দল বাঁধতে পারি, দলপতির নির্দেশে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারি। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে আমাদের কেউ বিদ্রোহী হয়ে সব উলটপালট করে দিতে পারে। এরকম প্রায়ই হয়, বিদ্রোহী হয় অরণ্যে পালায়, নয় দলপতির হাতে মরে। কদাচিৎ জিতেও যায়, তখন সে নতুন দলপতি হয়।

আমাদের আবেগ তীব্র আর দ্রুত। পশুর মতন আমরা চিৎকার করি, লাফাই ঝাঁপাই, হাসি কাঁদি, মাটিতে গড়াগড়ি দিই। আমাদের বন্য আবেগ দেখাই একেবারে খোলাখুলি। আমাদের দয়া-করুণা এখনো জাগে নি ভালো করে, আমরা অনায়াসে দেখি রক্তাক্ত আহত মৃতপ্রায় শত্রু মাটিতে পড়ে কাতরায় আর বিজয়ী তীব্র হিংস্র আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচে আর শত্রুকে খোঁচা দেয়।

আমাদের প্রাণ পোষ মানেনি, কেউ জানে না কে হবে পরবর্তী বিদ্রোহী। হয়তো আমাদের স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি ও এর জন্য কিছুটা দায়ী। আমরা নিজেদের অবাধ্য হবার পরিণতি কি হবে ভেবে ভয় পাবো কি, মনেই তো রাখতে পারিনা যে কারুর কোনো ভয়ানক পরিণতি হয়েছিল! কিন্তু আমরা বদলাচ্ছি, আস্তে আস্তে, দিনে রাতে বাদলাচ্ছি। সরু চাঁদের রাত থেকে গোলচাঁদের রাত ঘুরে ঘুরে আসে, আমরা বদলে যেতে থাকি। আমাদের দীর্ঘ স্মৃতি পরিস্ফুট হতে থাকে।

ভাঙা পাথরের লালচে বাদামী দাগে হাত রাখি। খুমানের রক্তের দাগ! আমার সারা শরীর কেমন ঝিনঝিন করে ওঠে। কি হলো? ভিতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট, যেন ছোটো ছোটো নুড়িপাথর গুলতি থেকে ছিটকে ছিটকে এসে লাগছে! আমি চুপ করে বসে থাকি। এমন তো আগে কখনো হয় নি! ঊপত্যকার নদীটার উথলে উথলে ওঠা ফেনাফেনা ঢেউগুলো যেন আমার বুকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে ঠেলা দিচ্ছে! অজানা বেদনা। অচেনা চিনচিনে বেদনা। কোথায় এর শুরু? কোথায় এর শেষ? সবকিছুর কি শুরু কোথায় আর শেষ কোথায় তা জানা যায়?

যেমন আমাদের নদীটা! শুনিয়া নদী। ওর শুরু আর শেষ তো আমরা কেউ জানিনা! শুনিয়া অজানা দেশ থেকে এসে আমাদের উপত্যকায় ঢুকেছে আবার কোথায় কোন্‌ অজানায় চলে গেছে কেজানে! আমরা শুধু দেখি যেদিকে জমি উঁচু, ঘন সবুজ অরণ্যের আড়ালে সেদিকে কোথায় লুকিয়ে আছে সব ধূসর সিংহেরা, খড়গনাসা গন্ডারেরা, চকরবকরা চিতাবাঘেরা-সেইদিক থেকেই কলকল করতে করতে আমাদের জমিনে ঢুকেছে শুনিয়া। আর যেদিকে মাটি নিচু, এবড়োখেবড়ো ছোটো বড় পাথর যেদিকে ছড়িয়ে আছে-ওরা আসলে পাথর না, আগের মানুষদের ঘুমন্ত আত্মা- তাদের ঘিরে সবুজ ঝোপে নীল আর হলুদরঙের ফুল ফোটে আর ফড়িং উড়ে উড়ে আসে-সেইসব পাথরের পাশ দিয়ে নামতে নামতে ঝাঁপ দিয়ে ঝর্ণা হয়ে নিচে অন্ধকারে কোথায় পড়েছে শুনিয়া! ওদিকে আমাদের যাওয়া বারণ, ওদিকে মানুষের জগতের শেষ, আত্মার জগৎ শুরু।

শুনিয়া শুধু নদীই না, আমাদের মাতৃকাদেবী। সেই তো আমাদের জল দেয়, কে না জানে জল না থাকলে আমাদের জীবন বাঁচে না। আমরা শুনিয়াকে পূজা করি, ফুল-পাতা দিয়ে পূজা করি, রক্ত দিয়ে পূজা করি। আমাদের মেয়েরা যখন মা হয়, শুনিয়ার জলেই তো ধুয়ে দেওয়া হয় মা ও শিশুকে। আমাদের শিশুরা যখন বড় হয়, শুনিয়ার কিনারেই তো খেলা করে তারা! আমরা জানি, শুনিয়ার জল আসলে মায়ের দুধ! আমরা কল্পনা করি, মস্ত মস্ত জটাওয়ালা কুঁচকানো মুখের যাদুকর-যাদুকরীরা আমাদের কল্পনা করতে শিখিয়েছে, শুনিয়া আসলে দেখতে মানুষের মতন কিন্তু পিঠে মস্ত সাদা উজল দুটি ডানা, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে শুনিয়া তার আসল রূপে এসে আমাদের দেখে যায়। আমি দেখার জন্য কতদিন শেষরাত্রে এসে শুনিয়ার পারে বসে থেকেছি। কিন্তু কিছু দেখিনি। যাদুকর-যাদুকরীদের ছাড়া হয়তো সে দেখা দেয় না।

আমাদের উপত্যকা পাহাড়ে ঘেরা, চারিদিকে সবুজনীলবাদামী পাহাড় আর ঘন অরণ্যে ঘেরা সবুজ ভূমিটুকুই আমাদের জগৎ। এর বাইরে কি আছে আমরা জানি না। বুড়ো যাদুকর নিষাত বলতো বাইরে আছে দেবতা আর দৈত্যদের দেশ, দৈত্যরা বিরাট বিরাট চেহারার, তাদের দেহ লম্বা লম্বা কালো লোমে ভরা, তারা খুবই শক্তিশালী আর বদখত। আর দেবতারা ভারী সুন্দর, তাদের ঝলমলে ডানা আছে, তারা উড়ে বেড়ায়। শুনিয়া তো দেবতাদের মেয়ে, তাই তার ডানা আছে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি অনেককাল আগে বিদ্রোহী খুম্বা যখন দলপতি তিমান্থের সঙ্গে ঝগড়া করে অরণ্যে পালিয়ে গেল, তখন সে কোথায় গিয়ে পড়েছিল? দেবতাদের দেশে নাকি দৈত্যদের দেশে?

পাথুরে চাতালের প্রান্তে এসে দাঁড়াই। এত উঁচু থেকে কতখানি দেখা যায় একসঙ্গে! ঐ যে মস্ত ওকুমে গাছটা, ওরই নিচে বসে তো আমাদের উপদেশ দিতো নিষাত! নিষাত মরে গেলে ওকে মাটির গভীরে শুইয়ে দেওয়া হলো তো ঐ গাছেরই কাছে! নিষাত মরে কোথায় গেল, দেবতাদের দেশে?

ওকুমে গাছের কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেলে দিই খোলা সবুজ জমিনের উপরে, শুনিয়ার জলধারা চিকচিক করছে সবুজের মধ্যে। দেখতে পাই একদল ছেলেমেয়ে খেলছে নদীর পারে, আমার আবছা মনে পড়ে আমি আর খুমান, তখন আমরা ছোটো, আমরা ও খেলতাম। আরো কতজন ছিল, কুশ....

তীরবিদ্ধের মতন ঘুরে তাকাই, এই গুহা কাল অবধি খুমানের ছিল, এখন কুশের। কুশ এখন আমাদের নতুন দলপতি। কাল খুমানকে হত্যা করে সে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে! খুমান কি সত্যি মরে গেছে? আর কোনোদিন সে ফিরবে না? আমি চোখ কুঁচকে আকাশের দিকে তাকাই, শকুন উড়ছে। সবই কি খেয়ে ফেলবে ওরা? কাল খুমান ছিল সাহসী, শক্তিশালী যুবক, আমাদের যূথের যূথপতি, আজ তার চিহ্ন কোথাও নেই! যন্ত্রণায় আমি তীরবিদ্ধের মতন ছিটকে উঠি, কোথা থেকে আসে এ যন্ত্রণা? কোনো তীর তো কেউ ছোঁড়েনি, লাল রক্ত তো বেরিয়ে আসছে না! তবু কিসের এ বেদনা?

কুশ এগিয়ে এলো, তার সবল বাহু ঘিরে ধরলো আমায়। খুমানের সবই এখন তার, প্রাক্তন সঙ্গিনীও তার। আমি স্থির হয়ে থাকি, বাধা দিয়ে কি হবে? কুশের নেতৃত্ব সবাই মেনে নিয়েছে, তাকে বাধা দেওয়া বিদ্রোহের সামিল। তবু ইচ্ছে করলেই আমি পারি, ছিটকে উঠে দাঁড়াতে পারি, পাথর দিয়ে লড়াই করতে পারি, হারিয়ে যেতে পারি অরণ্যে বা একেবারেই হারিয়ে গিয়ে খুমানের কাছে উপস্থিত হতে পারি। তাই কি? মরে গেলে কোথায় যাবো? খুমানের কাছে ? নাকি শুনিয়ার কাছে ? নাকি লোমশ দৈত্যদের দেশে?

দুর্বল আর ক্লান্ত লাগে, আদিম বন্য বিদ্রোহিনী ঘুমিয়ে পড়ে। কুশ প্রাণপণে চেষ্টা করে চলে উপভোগের, আমি লুটিয়ে পড়ে থাকি খুমানের কোমল রোমভরা বুকে। খুমান মরে নি, সে মরতে পারে না, সে ফিরে আসবে। অসহ্যরকমের দাপাদাপি শেষ হলে ক্লান্ত কুশ ঘুমিয়ে পড়ে, আমি এলিয়ে পড়ে থাকি আধাঘুমে আধা জাগনে। মনে পড়ে শেষরাতের শুনিয়ার কলকল শব্দ, সে কবে, কবে? খুমান আমায় ওখানে দেখে অবাক হয়ে বলেছিল, " তিবা, তুমি এখানে এসে বসে আছো এত রাতে?" কবে, সে কবে?

উষ্ণ লবণজল আমার গাল ভিজিয়ে দিতে থাকে, খুমান খুমান খুমান, তুমি কোথায় তুমি কোথায়? আমি বুঝতে পারি না, খুমান সাড়া দেয় আমার ভিতরে, হালকা কোমল একটা ধাক্কা। খুমান নতুন জন্ম নিয়ে ফিরে আসবে, শুধু সে না, আমিও তার সঙ্গে নতুন হয়ে জন্মাবো। জীবনের ভিতরে জীবন গড়ে ওঠার সেই তীব্র বেদনার আনন্দ আমায় ঘিরে ফেলে শুনিয়ার জলের মত।

***

"কি হলো, ট্রিণা?" যেন বহুযুগ পার হয়ে গলাটা ভেসে এলো। সত্যিই বহুযুগ পার হয়ে। অ্যডামের গলা। আমার কাঁধে হাত রেখে অ্যাডাম ঝাঁকানি দিয়ে আবার বললো, "তোমার কি হলো ট্রিণা?" অ্যাডাম তৃণা বলতে পারে না, বলে ট্রিণা।

ধাক্কা খেয়ে জেগে উঠলাম জাগরস্বপ্ন ভেঙে। স্বপ্ন? আমার চোখের সামনে যে বহুশত শতাব্দী পূর্বের জীবন অভিনীত হচ্ছিল, তা কি শুধুই আমার স্বপ্ন?

"আরে আমাদের আজকের ফিল্ডওয়ার্ক এখুনি শুরু করতে হবে। নিচে সবাই অপেক্ষা করছে! তুমি ঠিক আছো তো? "

আমার চোখ তখনো ঝাপসা, মাথা তখনো স্বপ্নটলমল। আমি দু'হাতের পাতা দিয়ে চোখের উপরে হালকা ঘষা দিই, উঠে দাঁড়াই। জিনসের প্যান্টের হাঁটুর কাছে ধূলা, ঝাড়তে ঝাড়তে বলি, "আমি একদম ঠিক আছি অ্যাডাম। ধন্যবাদ। চলো, কাজ শুরু করি।"

আমরা কাজ শুরু করলাম। আমরা, একবিংশ শতকের দুই মানবমানবী অ্যাডাম ও তৃণা, সেই বহুপুরাতন ঊষাযুগের সন্ততিদের জীবনরহস্য সন্ধানে উৎখনন শুরু করলাম। কী গভীর গোপণ সূত্রে আমরা যে তাদের সঙ্গে যুক্ত, সেই রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টায়। সে কঠোর বৈজ্ঞানিক নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া, সেখানে স্বপ্নের উৎপাত বরদাস্ত করা হয় না। খুব সাবধানে আমি লুকিয়ে ফেলি দীর্ঘশ্বাস, কেউ যেন কিছু না বুঝতে পারে।

শুধু দু'খন্ড হয়ে ভাঙা পাথরটি আমার দিকে চেয়ে থাকে, গুহার সামনের চাতালে একই জায়গায় সেটি পড়ে আছে, একইরকম ভাঙা। শুধু সেটার গায়ে লালচেবাদামী দাগগুলো আর নেই, কবেই সে দাগ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে।

(শেষ)

হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ

সময়ের স্রোতে নিত্য আলোড়িত হতে হতে কত দূরের মানুষ কাছে আসে, আলো হয়ে যায় মনের ঘর। আবার কত কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, বেদনার মতো বাজে চলে যাওয়া। কিন্তু আসলেই কি চলে যায় তারা? বাহিরে যে চলে গেলো, তার অশ্রুঝলোমলো মুখখানি ধরা থাকে স্মৃতিতে। বেদনার অর্ঘ্যে তার চিরদিনের অভিষেক। তাকে মুছবে কে?

"ভুলে যা" "ভুলে যা" "ভুলে যা" বললেই কি কিছু ভোলা যায়? কোন্‌ বহুদূরের পাহাড়ের চূড়া থেকে উৎপন্ন হয়ে, কত মাঠবন পার হয়ে, কোন্‌ সুখউঠানের পাশ দিয়ে কলকলিয়ে, কোন্‌ দুখপাথরের গায়ে জলহাত বুলিয়ে বুলিয়ে বয়ে যেতে থাকা জলছলছল নদীকে কি উৎসে ফিরে যা বললেই সে ফিরতে পারে?

ভুলে যাওয়া যায় না কিছুই। মনের স্তরে স্তরে আলোআঁধারির খেলা, ধাপে ধাপে নেমে গেছে সিঁড়ি, ও ও ও ই কত নিচে, শেষ দেখা যায় না। ধাপে ধাপে উঠেও গেছে সিঁড়ি, ও ও ও ও কত উপরে, ঝকমকে নীল যেখানে গভীর মধ্যরাত্রিনীলে মিলিয়ে গিয়ে তারার মণিকণায় হেসে উঠেছে, সেই দিকে, উপরের দিকেও শেষ দেখা যায় না। এই সব সিঁড়িরা কত সব রহস্যপুরীতে গিয়ে থেমেছে, কেজানে!

জীবনানন্দ চিরকাল সেই গভীর রহস্যলোকের গল্প বলেছে আমায়, মহীনের ঘোড়ারা সেখানে কার্তিকের জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে ঘাস খেয়ে চলেছে, সেখানে বিলুপ্ত নগরীর মর্মরপ্রাসাদে আজও অপেক্ষায় আছে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেম, ধানসিঁড়ি তীরে চেনা কাশফুলমাঠ ফিরিয়ে আনে গতজন্মস্মৃতি, হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে, হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে.....

হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ

ভিক্ষাপাত্র ধুয়ে নিয়ে বহে গেছে জল
স্মৃতিতে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে,
কুয়াশার মাঠশেষে বাঁশপাতাবনে
যেমন মায়াবী চাঁদ একা জেগে থাকে।

বাসনার ধূলাবালি ধুয়ে নেবো ভেবে
নির্বাসনস্নানে নামি নীবারার স্রোতে,
আকাঙ্ক্ষা-পাখিরা তবু ঝাপটায় ডানা
দুইচোখে জলছবি ছায়াতে আলোতে।

ভেবেছি তো নি:শেষে ভুলে যাবো সব
আগুনের শিখা জ্বেলে করেছি শপথ,
তপ্ত হাওয়ায় তবু উড়ে আসে বালি
ছুঁয়ে যায় শিলাঢাকা হৃদয়ের পথ।

এখনো সে পুরাতন জল বয়ে চলে
এখনো জমে নি সব কঠিন বরফে-
এখনো তো পাখামেলা মেঘ ভালোবেসে
আলো লিখে যায় গান অচেনা হরফে।

ভিক্ষাপাত্র ধুয়ে নিয়ে বহে গেছে জল
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে.....
হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ তবু লেগে থাকে.....

***