Friday, September 4, 2015

তোমার মুখ

তোমার মুখ আলোকিত নীল
তোমার চোখে রোদ্দুরের জরির কাজ
কপালে, চিবুকে আনন্দের চন্দনসাজ।
আমি মাটির ঘর থেকে সসঙ্কোচে
লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখি-
আর সাবধানে দীর্ঘশ্বাস গোপণ করে
নিজের মাটিমাখা হাতের দিকে তাকাই।
দু'হাতে ভেজা মাটি ছেনে যথাসাধ্য যত্নে
ছোট্টো ছোট্টো মাটির পুতুল বানাই।
কড়া রোদ্দুরে শুকিয়ে নিয়ে
ওদের গায়ে রঙ দিই,
নীল রঙ, সোনালি রঙ, সাদা রঙ-
স্বপ্ন দেখি একদিন সেই নীলে আকাশ ফুটবে
সেই সোনালিতে রোদ্দুরের ঝিকিমিকি,
সেই সাদায় আনন্দের জ্যোৎস্না ফুটে উঠবে।
কিছুই ফোটে না,
আমার মাটির পুতুলেরা
ব্যথানীল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু।

ফিরে আসা

ছোট্টো একটা কচিমুখের
দুধে-দাঁত ঝিকমিকানো হাসি
একবার আমাকে ফিরিয়ে এনেছিল
ধূসর বিস্মৃতির ভয়ংকর বালিয়াড়ি থেকে,
সবুজের ছায়াজাল আঁকা স্মৃতির সরণীতে।

আকাশি জমিনের উপরে লাল বুটি বুটি দেওয়া
তাঁতের শাড়ীখানার চেনা সুগন্ধ
একবার আমাকে ফিরিয়ে এনেছিল
তামসী রাত্রির অন্ধকারযাত্রা থেকে
কোমল ভোরের শিশির-টলটল আলোয়।

শিরতোলা দুটি ঝিনুকের খোলা পাশাপাশি সাজানো ছিল
দেখনবাক্সের কাচের দেওয়ালের ভিতরে,
কোনোদিন হয়তো ইচ্ছেমুক্তো ছিল
ওদের কবেকার ভুলে যাওয়া শরীরে।
একদিন ওদের দিকে তাকিয়েই ফিরে এসেছিলাম
প্রতিদিনের মাটি-বালি-পাথরের সংসারে,
ঝড়ের সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে লবণাক্ত অশ্রুর অর্ঘ্যে।

স্বর-ব্যঞ্জন লিপি

একপাতে রাখা স্বরলিপি আর
অন্য পাতায় ব্যঞ্জন,
থালায় সাজানো জরিবুটি ঘিরে
বোবা শরীরের রঞ্জন।

জ্বলেছে পুড়েছে তন্দুর আর
উঠেছে আগুন গনগন,
মশলার ঝাঁঝ চোখেমুখে আর
হাতে হাতা বেড়ি ঝন্‌ঝন্‌ ।

ছুরি কাঁচি বঁটি কুড়ুনি
খুঁড়ে খুঁড়ে গেছে নন্দন,
পাথরফলার ডান্ডায়
শিলে বাটা হলো ক্রন্দন।

গেলাসে গেলাসে নোনাপানি আর
টুকরো লেবুর স্পন্দন,
উড়েছে ঘুরেছে চাপা ছাই
আর চৈত্রবনের চন্দন।

ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো যদি বলি

ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো যদি বলি
করবে কি ক্ষমা, ধরবে কি এসে হাত?
কবে কোথায় হারিয়েছে ধূলিখেলা
কোন্ অমারাতে লুকিয়ে গিয়েছে চাঁদ।

এখনো অনেক পথ তো রয়েছে বাকি
দু'পায়ে এখনই এত যে ক্লান্তি কেন!
খররৌদ্রের দুপুর এখনও ঢলেনি
এখনই দু'চোখে এত ঘুম নামে কেন?

পথের গোলাপ তৃষ্ণা নিয়েছে ছিঁড়ে
নগ্ন দু'পায়ে কেবলই কাঁটারা ফোটে,
গোড়ালি ছাপিয়ে অবুঝ রক্ত ঝরে,
বুকের পুকুরে নিঝুম দুপুর জোটে।

ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো যদি বলি,
আসবে কি তুমি, ধরবে কি এসে হাত?
স্মৃতিবেদনার গহীন প্রহর থেকে
উদ্ধার করে ঘুচাবে কি পরমাদ?

Through The Starry Darkness

I walked through starry darkness of a summer night
Following the footprints you left on the sand of time-
No one knew about my lonely search
Except the night sky which kept it memory well hidden
Inside the wings of glowing nocturnal clouds.

You came back when I disappeared into the mist
Just like a cloud which easily disappears into thin air-
You found one blue feather on my doorstep
Along with tiny dried petals of a red flower.

New Dawn

Hidden inside the glittering foil of pleasure
There exists a secret agony, a longing-
Like a lonely butterfly
It is flying around in autumn garden
Going from one tree to another.

It is flapping its wings
Against the red and orange leaves,
The leaves ready to fall
And disappear into darkness.

Above them up in the air –
Soft white clouds are losing their glory
To foggy and grey time of winter.

Somewhere far away-
Someone is waiting sleeplessly,
Inside the prison of time.
He still hopes to free the messenger dove
The free bird will across the empty dark void
To reach the heart of a new dawn.

Alphabets

Our alphabets fell asleep
Me and you sat by their side-
Silent, sad and exhausted.

We still had our senses to feel
We saw the shades of grey,
We heard the noise of discord
We smelled the scent of melancholy
We tasted bitter sweet,
And we felt cold, very cold -
So we embraced each other.
At that moment –
Alphabets woke up one by one
And we began our poems and songs
To flow without end.

The Blood-Red Moon

Storming through the ocean
The wild one reached the blue hills of the coast
And suddenly stood there, silent.
Grey clouds filled his hairs
An unknown light flickered in his bright eyes.

A strange moon rose from the horizon
It was as red as blood-
Then the giant waves rose high
The great drama began to unfold.

কাছে কাছে থাকি

তোকে ছেড়ে যাইনি কখনও
সবসময়েই কাছে কাছে থাকি,
একসাথেই কলাপাতায় সাজিয়ে দিই
চাট্টি গরম ভাত, এক হাতা মুসুর ডাল
একচিমটি লবণ, একটুকরো পাতিলেবু-
খেতে খেতে কত কথা হয়
হাসিকথা দুঃখকথা আনন্দকথা ব্যথাকথা
তবু তুই ভয় পাস আমি দূরে যাবো বলে?

সেই যে তোর বুকের মধ্যে লেবুপাতার গন্ধ ছিল-
আমি বলতাম তোর মধ্যে লেবুর বাগান বুঝি?
আছে সেই বাগান এখনও?
ঐ যে আমাদের সজনেগাছে
থাকতো দুটি কাঠবেড়ালী?
সজনেতলায় দৌড়োদৌড়ি করে
খেলে বেড়াতো ঝিমদুপুরে?
ওরা কোথায় আজ?
ঐ যে টালির চালের ঘরে
বাসা বানাতো দুই চড়াইপাখি?
আমরা ওদের নাম দিয়েছিলাম
ইমন আর রূপসা?
ওরা কোথায় গেল?

আমি আজ পাহাড়ী নদীতীরে
তুই আজ দূর সমুদ্রের কিনারায়-
তবু কিন্তু কাছে কাছে থাকি আমরা।
ইমন রূপসা কাঠবেড়ালী লেবুর বাগান-
সবাই আছে আমাদের ঘিরে-
বাইরে নাই বা রইলো!

তোকে ছেড়ে যাইনি কখনও-
কাছে কাছেই আছি,
কাছে কাছেই থাকি।
চিরদিন।

জ্যোৎস্না-জরি

আমাকে দেউলিয়া করে চলে যায় চাঁদ
পথে পথে পড়ে থাকে টুকরো টুকরো
জ্যোৎস্নার রুপোলি জরি।
আকাশের নীল ভেলভেটে
দপদপ করে জ্বলে সুদূরের নক্ষত্রেরা-
শক্তিময় কিন্তু নিরাসক্ত।

রাত্রির জঙ্গলে পথ হারিয়ে
একবার একদিকে ছুটে যাই
একবার তার বিপরীত দিকে-
ধ্রুবতারা দেখতে পাই না।
আসন্ন শীতের দিনের কথা ভেবে
ভীরু গাছেরা নীরব হয়ে আছে
ওদের সবুজ পাতার আঁচলে
এবারে পড়তে শুরু করবে
লাল-বাদামী-খয়েরী বিদায় অক্ষর।

এমন সব সময়েই তোকে মনে পড়ে,
শীতভীরু পাখির যেমন মনে পড়ে
সূর্য-ঝলমল বসন্তদিন, তেমনই।
ওরা ডানা মেলে উড়াল দেবে
দক্ষিণের বসন্তের দেশের দিকে,
আমার ডানা দুটি বন্ধক দেওয়া আছে বলে
এবারেও আর উড়াল দেওয়া হবে না।

আমাকে নিঃস্ব করে চলে গেল চাঁদ
পথে পথে অবহেলায় ছড়িয়ে পড়ে আছে
ওর ফেলে যাওয়া জ্যোৎস্নার জরি।